সৌদি আরবের কাছ থেকে নেয়া দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানকে দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে চীন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের দুই বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সোমবার এক বিলিয়ন ফেরত দেবে পাকিস্তান। এছাড়া বাকি এক বিলিয়ন ডলার আগামী জানুয়ারিতে পরিশোধ করার কথা রয়েছে।

তবে চীন পাকিস্তানকে যে ঋণ দিতে চাচ্ছে সেটি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ (সেফ) তহবিল থেকে বা বাণিজ্যিক ঋণ হিসেবেও দেয়া হচ্ছে না। এর পরিবর্তে ২০১১ সালের দ্বিপাক্ষিক কারেন্সি সোয়াপ এগ্রিমেন্টের (সিএসএ) ভিত্তিতে চীন পাকিস্তানকে ওই দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। এই ঋণের বিনিময়ে পাকিস্তানের কাছে থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সুবিধা নেবে চীন।  

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সরাসরি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং স্বল্প সময়ের আর্থিক ঋণ দেয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সালে পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং চীনের পিপলস ব্যাংক অব চায়নার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।  

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এই চুক্তিটি তিন বছরের জন্য নবায়ন করে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা দেড় বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়। চার বছর পর ২০১৮ সালে আবারও এটি তিন বছরের জন্য নবায়ন করা হয়। এবার এই চুক্তি অনুযায়ী ঋণের সীমা ২০ বিলিয়ন ইউয়ান বা তিন বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়।

আগামী বছরের মে মাসে চীন-পাকিস্তানের এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান এই চুক্তির মেয়ার আরও তিন বছরের জন্য বৃদ্ধি করতে চীনকে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানকে সবচেয়ে বেশি ঋণ সরবরাহ করে আসছে এশিয়ার অন্যতম সুপার পাওয়ার চীন। এছাড়া দেশটিতে চীনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে। 

২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ইমরান খান এখন পর্যন্ত দু’বার সৌদি আরব সফর করেন। সেই সময় সৌদি আরব পাকিস্তানকে ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের একটি আর্থিক প্যাকেজ দিতে রাজি হয়।

এরমধ্যে ছিল ৩ বিলিয়ন নগদ অর্থ সহায়তা এবং বাকি ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মূল্যের বার্ষিক তেল এবং গ্যাস সরবরাহ।

চুক্তি অনুযায়ী, নগদ তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ পরবর্তী এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করার কথা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু সৌদি আরব নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে এই অর্থ ফেরত চায়। এর ফলে সৌদির তিন বিলিয়ন ডলারের নগদ ঋণের বিপরীতে পাকিস্তান তিন শতাংশ সুদ পরিশোধ করে। 

সৌদি ঋণে পাকিস্তানের অর্থনীতির চাকায় কিছুটা গতি ফিরলেও ফেরত চাওয়ায় তাতে ভাটা পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়। চুক্তির দেড় বছরের মাথায় গত বছরের মাঝের দিকে পাকিস্তানে ঋণ হিসেবে তেল এবং গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় চীন।

এছাড়া চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তান সৌদি আরবকে তিন বিলিয়ন ডলারের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ ফেরতও দিয়েছে। পাকিস্তান এই অর্থ ফেরত দিয়েছে সমপরিমাণ ঋণ চীনের কাছ থেকে নেয়ার পর।
 
সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ইন্ডিয়া ট্যুডে।

এসএস