জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এ যাবৎকালের মধ্যে রেকর্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর বরফ ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের তুলনায় দ্রুতগতিতে গলছে। সোমবার দ্য ক্রিওস্ফেয়ার জার্নালে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই তথ্য জানিয়েছেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সমুদ্রের বরফ, মহাদেশীয় বরফ এবং হিমবাহ থেকে বরফ গলেছে প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন। বরফ গলার এই হার তিন দশক আগের তুলনায় বছরে ৫৭ শতাংশ বেশি।

ব্রিটেনের লিডস ইউনিভার্সিটির হিমবাহ বিশেষজ্ঞ থমাস স্ল্যাটার বলেছেন, মাত্র ৩০ বছরে বরফের এত দ্রুতগতিতে গলে যাওয়ার হার বৃদ্ধি অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। তিনি বলেছেন, পানীয় জলের জন্য যারা পর্বতের হিমবাহের ওপর নির্ভরশীল, অথবা ঝড় থেকে উপকূলীয় ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য যারা শীতকালীন সমুদ্রের বরফের ওপর নির্ভর করেন; তাদের পরিস্থিতি পরিষ্কার হলেও বিশ্বের বরফ গলে যাওয়ার এই হার হিমশীতল অঞ্চলের মানুষের মনযোগ নতুন করে আকর্ষণ করছে।

বিশ্বজুড়ে বরফ গলে যাওয়ার কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাকশিল্প যুগের তুলনায় ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গত ৩০ বছরে বৈশ্বিক তাপমাত্রার চেয়ে সুমেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

স্ল্যাটার বলেছেন, অ্যান্টার্কটিকা, গ্রিনল্যান্ড এবং পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ থেকে বরফ গলে যাওয়ায় গত তিন দশকে সমুদ্রের পানির স্তর ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে; যে কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা একই সময়ে সাড়ে তিন সেন্টিমিটার বেড়েছে। বার্ষিক যে পরিমাণ বরফ গলে যাচ্ছে তার প্রায় ২২ শতাংশই পর্বত হিমবাহের।

১৯৯৪ থেকে ২০১৭ সালের স্যাটেলাইট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ১৯৯০ এর দশকের প্রত্যেক বছরে বিশ্ব গড়ে বরফ হারিয়েছে শূন্য দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে গড়ে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন বরফ গলেছে।

কলোরাডোর বোল্ডারের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের গবেষক-বিজ্ঞানী জুলিয়েনি স্ট্রোভ বলেছেন, নতুন এই গবেষণায় বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। এটি করা হলে বরফ গলে যাওয়ার হার এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে আরও পরিবর্তন আসতো। এছাড়া গবেষকরা নদী, হৃদ ও ভূগর্ভস্থ হিমায়িত অঞ্চলকেও তাদের এই গবেষণায় অন্তর্ভূক্ত করেননি। গত কয়েক দশকে এসব অঞ্চলের বরফও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস