যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ব্যাপক কারচুপির’ অভিযোগ তুলে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা মামলার আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছে মার্কিন ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন কোম্পানি ডমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমস ইন্টারন্যাশনাল।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে দায়ের করা ১৩০ কোটি ডলারের ওই মানহানি মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘তিনি (রুডি জুলিয়ানি) এবং তার সঙ্গীরা সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ভোটে কারচুপি বিষয়ক যে মিথ্যা অভিযোগ দেশব্যাপী প্রচার করেছেন এবং এই মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আইনের সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন, তাতে লাখ লাখ মার্কিন নাগরিকের মনে বিশ্বাস জন্মেছে যে ডমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমস ইন্টারন্যাশনাল তাদের ভোট চুরি করেছে এবং নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকে সাজানোর বিষয়ে সহযোগিতা করেছে।’

‘তাদের এই মিথ্যাচারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ এবং পুরো বিশ্বের সামনে আমাদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমস এর এক কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে এ বিষয়ে বলেন, ‘ভোটে কারচুপির মিথ্যা অভিযোগ প্রচারের ফলে দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে যে কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে, তা মোছার চেষ্টাসহ ডমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমস তার নিজের, নিজের কর্মচারীদের এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে এই মামলা করা হয়েছে।’

তিনি আরো জানান, এর আগে ‘ভোট সুষ্টু হয়নি’ নামের যে প্রচারাভিযান চালিয়েছিলেন ট্রাম্প, সেই প্রচারাভিযানের আইনজীবী সিডনি পাওয়েলকে মিথ্যাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেও একটি মামলা করেছে ডমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমস।  

আইনজীবী ও নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানির আইনজীবী রবার্ট কস্টেলো অবশ্য এই মামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে ট্রাম্পের মিথ্যা অভিযোগের পক্ষে আইনী লড়াই চালানোর জন্য গতসপ্তাহে নিউইয়র্কের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আদালত বরাবর জুলিয়ানির আইনব্যবসার লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করেছেন।

গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিন্তু পরাজয় মেনে নেওয়ার পরিবর্তে ট্রাম্প নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলেন এবং দেশের বিভিন্ন আদালতে নির্বাচনের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েকটি মামলাও করেন।

তবে অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে না পারায় তার সবগুলো মামলাই খারিজ করে দেন আদালত; কিন্তু ট্রাম্প তার অবস্থানে অটল থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বক্তব্য ও ভিডিও পোস্ট করে নিজের সমর্থকদের বারবার বলতে থাকেন- নির্বাচনের ফল চুরি করা হয়েছে।

এর মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি ঘটে যায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনা। জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দিতে ওইদিন দেশটির পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে বসেছিল নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সিনেটের এক যৌথ অধিবেশন। ট্রাম্পের উস্কানিতে সেই অধিবেশনে হামলা চালায় কয়েক হাজার ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থক, যাতে প্রাণ হারান দুই পুলিশ সদস্যসহ ৬ জন।

এসএমডব্লিউ