‌‘যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের শক্তির জানান দিতে প্রায়ই বিমান এবং যুদ্ধজাহাজ পাঠায়; যা শান্তির জন্য ভালো কিছু নয়।’ দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো বিমানবাহী রণতরীর বহর প্রবেশের পর সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মন্তব্য করেছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।

কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে প্রত্যেক বছর ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন হয়। এই সাগরের বিতর্কিত জলসীমা নিয়ে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের দীর্ঘদিনের বিবাদ রয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর তৎপরতায় চীন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথ নেয়ার দু’দিন পর সমুদ্রে অবাধ বিচরণের ধারণা এগিয়ে নিতে যুদ্ধবিমানবাহী ইউএসএস থিওডর রুজভেল্ট রণতরীর যে বহর শনিবার দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশ করেছে সেই বহরে তিনটি যুদ্ধজাহাজও রয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে এই রণতরীর বহর চীন সাগরে পাঠানোর বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে।

নিজেদের শক্তির জানান দিতে দক্ষিণ চীন সাগরে বিমান এবং যুদ্ধজাহাজ বারবার মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি এই অঞ্চলের শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক কিছু নয়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝ্যাও লিজিয়ান

দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের দখলকৃত দ্বীপের একেবারে কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জাহাজ চলে আসছে বলে প্রায়ই অভিযোগ করছে চীন। একই জায়গার মালিকানা ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রুনাই এবং তাইওয়ানও দাবি করে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ক্ষমতায় আসার কয়েকদিনের মধ্যে এই দ্বীপে চীন-তাইওয়ানের তুমুল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাইওয়ানকে জোরাল সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি অস্ত্রও বিক্রি করেছে। এছাড়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ একাধিক কর্মকর্তা তাইওয়ান সফর করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল চীন।

গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে নিজ ভূখণ্ড বলে দাবি করে চীন। গত কয়েক মাসে এই দ্বীপের আশপাশে সামরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে দেশটি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই দ্বীপের আশপাশে সাধারণ বিমানের চলাচল অব্যাহত রেখে শত্রুপক্ষের ওপর নজরদারি চালালেও গত কয়েকদিন ধরে যুদ্ধ এবং বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে চীন।

তাইওয়ান বলছে, শনিবার তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা অঞ্চলের মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত প্রাটাস দ্বীপপুঞ্জের আকাশে চীনের ৮টি বোমারুবিমান এবং চারটি যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশের পরদিন দক্ষিণ চীন সাগরের এই একই স্থানে রোববার আরও ১৫টি বিমান উড়িয়েছে বেইজিং।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ছয়টি জে-১০ যুদ্ধবিমান, চারটি জে-১৬এস, দু’টি এসইউ-৩০এস ও একটি নজরদারি যুদ্ধজাহাজ ওয়াই-৮ এবং দু’টি অ্যান্টি সাবমেরিন ওয়াই-৮ পাঠিয়েছে চীন। অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় তাইওয়ানও বিমানবাহিনীর সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীর বহর এমন এক সময় দক্ষিণ চীন সাগরে ঢুকলো যখন স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ান দাবি করেছে তাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় চীনের বিমানবাহিনীর যুদ্ধ ও বোমারুবিমানের অনুপ্রবেশ শনাক্ত করা হয়েছে; যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে ওয়াশিংটনের। 

তবে চীনের বিমানবাহিনী যা করেছে; সেব্যাপারে কোনও মন্তব্য না করে দেশটির অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তাইওয়ান চীনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এক চীন নীতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রদ্ধা দেখানো উচিত।

চীনের সঙ্গে উত্তেজনার পর সোমবার তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট এই দ্বীপ ভূখণ্ডের উত্তরাঞ্চলের একটি রাডার ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়ে চীনা সামরিক বাহিনীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হওয়ায় নিজ প্রতিরক্ষাবাহিনীর প্রশংসা করেন।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস