পুরুষের শুক্রাণুর মান ও প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে করোনা
পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় করোনাভাইরাস, এমনকি ক্ষতি করতে পারে শুক্রাণুর মানেরও। সম্প্রতি করা এক গবেষণায় পরীক্ষামূলক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। তবে গবেষকদের অন্য অংশ বলছে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।
করোনা মহামারিতে বর্তমানে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ২২ লাখ মানুষ মারা গেছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পুরুষের শুক্রাণু কোষের মৃত্যু ঘটাতে পারে করোনাভাইরাস। এছাড়া প্রদাহ এবং তথাকথিত ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’কে বাড়িয়ে দিতে পারে এই ভাইরাসটি। শুক্রবার একটি জার্নালে এই খবর জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
তাদের দাবি, ‘কোভিড-১৯ যে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার ক্ষতি করতে পারে তা প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ও পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণ করেছে তাদের গবেষণা।’
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত এক বছরের বেশি কিছু সময়ের মধ্যে সারা বিশ্বে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড -১৯ বিশেষত বয়স্ক ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার সৃষ্টি করে।
মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রামিত হলেও শরীরে প্রবেশের পর ভাইরাসটি ফুসফুস, কিডনি, অন্ত্র এবং হৃৎপিন্ডের ক্ষতি করে। একইসঙ্গে এটি পুরুষের প্রজনন অঙ্গগুলোর ক্ষতি করতে পারে। গবেষকদের দাবি, শুক্রাণু কোষের বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রজনন সংশ্লিষ্ট হরমোনগুলোকে প্রভাবিত করে করোনাভাইরাস। এমনকি ফুসফুস টিস্যুতে পাওয়া ভাইরাসের রিসেপ্টরের মতো একই রিসেপ্টর অণ্ডকোষেও পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে গবেষণায়।
তবে করোনায় আক্রান্ত পুরুষদের পুনরুৎপাদন ক্ষমতার ওপর ভাইরাস কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ১০ দিনের ব্যবধানে গবেষণাটি ৬০ দিন ধরে করা হয়। এসময় ৮৪ জন করোনায় আক্রান্ত ও ১০৫ জন সুস্থ পুরুষের নমুনা নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা।
এতে দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শুক্রাণু কোষগুলোর প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের চিহ্ন উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হতে পারে যা মানবদেহের ডিএনএ এবং প্রোটিনের ক্ষতি করতে পারে। শুক্রাণু কোষের ওপর এই প্রভাবগুলো শুক্রাণুর গুণগত মান এবং প্রজনন ক্ষমতার সম্ভাবনা হ্রাস করে দেয়। যদিও এই সমস্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায় বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষকদের মতে, কোভিড -১৯ রোগে সংক্রমিত পুরুষদের প্রজনন অঙ্গকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচিত- এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে ঘোষণা করা।
এদিকে গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন এমন বিশেষজ্ঞরাও এই গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন ছিল।
ব্রিটেনের কেএআরই ফার্টিলিটি গ্রুপের ভ্রূণতত্ত্ব পরিচালক অ্যালিসন ক্যাম্পবেলের মতে, পুরুষদের অযৌক্তিকভাবে আতঙ্কিত করা উচিত নয়। তিনি লন্ডনভিত্তিক একটি সাইন্স মিডিয়া সেন্টারে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে পুরুষের শুক্রাণু বা প্রজনন ক্ষমতার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়, এমন কোনো সঠিক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।’
এছাড়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে পুরুষদের প্রজনন সক্ষমতায় বাধার সৃষ্টি করে বলে গত বছরের মার্চে জানিয়েছিলেন চীনের চিকিৎসকরা। এমনকি করোনা থেকে সুস্থ হওয়া পুরুষদের প্রজনন সক্ষমতা পরীক্ষারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা।
তাদের দাবি, কোনো পুরুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর প্রভাব শুক্রাশয়েও পড়তে পারে। আর এতে শুক্রাশয়ের কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। এছাড়া পুরুষের অণ্ডকোষে প্রচুর পরিমাণে টিস্যু থাকে। এটি বেশ কয়েকটি কোষে কেন্দ্রীভূত হতে পারে।
জীবাণু কোষ, সহায়ক কোষ এবং জনন কোষ পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকে। ফলে করোনার আক্রমণে এই কোষগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তবে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
সূত্র: এএফপি
টিএম