টিকা রপ্তানি আটকে দিল ইইউ
করেনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা সরবরাহ করা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আগে থেকেই চলছিল টানাপোড়েন। চাহিদা মতো টিকা সরবরাহ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল ইইউ। তবে এবার আর ক্ষোভ নয়, ইইউ থেকে টিকা রপ্তানি সরাসরিই আটকে দিয়েছে সংস্থাটি। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহ পরিকল্পনায় কাটছাঁট নিয়ে বিরোধের জেরে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে ইইউ।
উৎপাদন জটিলতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সম্প্রতি ইইউ’কে জানায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। অন্যদিকে টিকাদান কর্মসূচিতে ধীরগতির কারণে সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। ২৭টি সদস্য দেশের সকল মানুষের জন্য এই টিকা কিনেছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) ইইউ জানিয়েছে, টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি অনুযায়ী টিকা ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে টিকা সরবরাহ করতে না পারলে, এই ব্লকের মধ্যে (ইউরোপে) উৎপাদিত টিকা বাইরে রপ্তানি করতে দেওয়া হবে না। সংস্থাটির কথায়, ‘আমাদের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাই সবার আগে। আমরা যে সংকটের মুখোমুখি হয়েছি, তাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না।’
অবশ্য ইইউ’র এই ঘোষণায় অসন্তুষ্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির সহকারী প্রধান মারিঅ্যাঞ্জেলা সিমাও ইইউয়ের এই সদ্ধান্তকে ‘খুবই উদ্বেগের বিষয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদন করছে ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ব্রিটেন বের হয়ে গেলেও সুইডেন ইইউয়ের সদস্য দেশ। অন্যদিকে ফাইজার-বায়োএনটেকও ইউরোপে টিকা উৎপাদন করছে। বায়োএনটেক মূলত জার্মান প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের টিকা উৎপাদন কারখানা অবস্থিত বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। সেখানে উৎপাদিত টিকাই ইইউ-বহির্ভূত দেশ ব্রিটেনে সরবরাহ করা হচ্ছে।
তবে চাহিদা মতো টিকা সরবরাহ না পাওয়া নিয়ে অ্যস্ট্রাজেনেকার সঙ্গেই মূলত বিবাদ চলছে ইইউয়ের। আর এখন টিকা রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়বে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। অবশ্য ইইউয়ের দাবি, টিকা রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত সাময়িক। এটা স্থায়ী কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। কিন্তু সাময়িক হলেও, নতুন নিয়মে ইউরোপের বাইরে টিকা পাঠাতে হলে ইইউয়ের অনুমতি লাগবে।
ইইউ সদস্যভুক্ত কয়েকটি দেশে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকা সরবরাহে কাটছাঁটের জন্য টিকাদান কর্মসূচি চলছে ধীরগতিতে। আর তাই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছিল কয়েকটি দেশ।
গত সোমবার টুইটারে ইইউয়ের স্বাস্থ্য কমিশনার স্টেলা কাইরিয়াকিডস জানিয়েছিলেন, টিকা সরবরাহের বিষয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের কথায় স্বচ্ছতা ও ব্যাখ্যার স্বল্পতার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অসন্তুষ্ট। তিনি বলেছিলেন, ‘ইইউয়ের সকল সদস্য দেশ ঐক্যবদ্ধ। টিকা উৎপাদনকারী হিসেবে তাদের (অ্যাস্ট্রাজেনেকা) সামাজিক ও চুক্তিগত ভাবে কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাদের সেগুলো পূরণ করা উচিত।’
এরপর গত শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি জানান, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে- ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ইইউয়ের আগাম সব টিকা ক্রয় চুক্তি নিরাপদ রাখা, ইইউভুক্ত সদস্যদেশগুলোর নাগরিকদের জন্য টিকা সহজলভ্য করা এবং নিয়ম মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
ইইউভুক্ত দেশগুলোর ৪৫ কোটি মানুষের জন্য ছয়টি টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে ২৩০ কোটি ডোজ টিকা কেনার আগাম চুক্তি করে রেখেছে সংস্থাটি। এ কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, কিউরভ্যাক, জনসন এন্ড জনসন ও সানোফি-গ্ল্যাক্সেস্মিথক্লাইন।
এর আগে ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রস অ্যাধানম গেব্রিয়েসাস বলেছিলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে জাতীয়তাবাদ শুরু হলে করোনা মহামারি থেকে বিশ্বের বেরিয়ে আসা কঠিন হবে।’
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস
টিএম