ভুল টুইট করে দেশদ্রোহে অভিযুক্ত ভারতের শীর্ষ একাধিক সাংবাদিক
ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল নিয়ে প্রতিবেদন এবং টুইটের জন্য দেশটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। রাজদীপ সারদেশাই, মৃণাল পান্ডে, জাফর আগার মতো সুপরিচিত সাংবাদিকরা ছাড়াও কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও এই অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন। মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের পর নয়াদিল্লি পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে।
ভারতে সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা জানিয়ে বলেছে, বাছাই করা সাংবাদিকদের নিশানা করে যেভাবে তাদের ‘ভয় দেখানো হচ্ছে’ তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, কৃষক আন্দোলন কভার করার সময় দিল্লি সীমান্ত থেকে পুলিশ শনিবার রাতে দু’জন তরুণ সাংবাদিককে গ্রেপ্তারও করে।
গত ২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর র্যালি চলাকালীন শহরের আইটিও এলাকায় একজন কৃষকের মৃত্যু নিয়ে রাজদীপ সারদেশাই ও দেশের আরও কয়েকজন সাংবাদিক যে প্রতিবেদন করেছিলেন, সেজন্য তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রাজদীপ সেদিন টুইটে বলেছিলেন, পুলিশের গুলিতেই ওই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু পরে জানা যায়, আসলে ট্রাক্টর উল্টে এক দুর্ঘটনায় ওই ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজদীপ সেই টুইট মুছে দিলেও এজন্য দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের করেছে।
বিজ্ঞাপন
একই অভিযোগে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল হেরাল্ড গোষ্ঠীর সিনিয়র সম্পাদক মৃণাল পান্ডে, দ্য ক্যারাভান ম্যাগাজিনের পরেশ নাথ ও অনন্ত নাথ, কওমি আওয়াজের সম্পাদক জাফর আগা প্রমুখ। এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট সীমা মুস্তাফা বলেন, আমরা যারা বছরের পর বছর ফিল্ডে নেমে সংঘর্ষ, দাঙ্গা, জাতিগত সংঘাত কভার করেছি; তারা জানি প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ওপর কীভাবে আমাদের নির্ভর করতে হয়।
‘তাতে কখনও কখনও যে ভুলভ্রান্তি হয় না তা নয়, আর এখানে সেরকম ভুল হয়েছে কিনা তাও বলা যায় না। কিন্তু তাই বলে দেশদ্রোহের অভিযোগ?’
এই দেশদ্রোহ আইনটাই বহু বছর আগে তুলে দেওয়া উচিত ছিল। আর সেটা না করে সরকার সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর কাজে লাগাচ্ছে, যাতে তারা কিছু লেখার আগে দু’বার ভাবতে বাধ্য হয়! তবে অভিযোগকারীরা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, এসব ব্যক্তির ‘ডিজিটাল ব্রডকাস্ট’ ও ‘সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে’র কারণেই সেদিন রাজধানীর বুকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল।
দেশটির বিভিন্ন ডানপন্থী নিউজ চ্যানেলেও চলছে এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচারণা। দিল্লিতে জনপ্রিয় ইউটিউবার সুমন পান্ডে বলছেন, পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর এত বড় মিথ্যা কথা বলে রাজদীপ সারদেশাই একটা দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিলেন, যেমনটা তিনি প্রায়ই করেন!
উত্তরপ্রদেশের নয়ডাতে এমনই একজন সাধারণ মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর নিয়েছে। দিল্লি পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য প্রচারের কারণেই হিংসা উসকানি পেয়েছিল। অমিত মালভিয়ার মতো জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতারাও সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজদীপ সারদেশাইদের ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছেন।
ইউটিউবার সুমন পান্ডে বলছেন, ‘অথচ সেটা ডিলিট করার সময় কোনও ভুল স্বীকার নয়, ক্ষমা চাওয়া নয়- একেবারে চোরের মতো চুপচাপ সেটা মুছে দিলেন!’
তবে ভারতের প্রধান সাংবাদিক সংগঠনগুলো প্রায় সবাই একজোট হয়েই তাদের অভিযুক্ত সহকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দিল্লির জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদসভায় ইন্ডিয়ান উইমেন প্রেস কোরের সাধারণ সম্পাদক ভিনিতা পান্ডে বলেন, সরকারের সাথে সাংবাদিকের আসলে কখনও বন্ধুত্ব হয় না। তাদের আয়না দেখানোই আমাদের কাজ। কোনও সাংবাদিকের সঙ্গে যদি কোনও রাজনীতিকের মিত্রতা হয় বা কেউ যদি সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে সেটাকে সমস্যা হিসেবেই দেখা উচিত।
‘আমাদের সরকার সেটা বুঝেও না বোঝার ভান করছে, আর কেউ সমালোচনা করলেই আইনের অপব্যবহার করে তাদের ভয় দেখাচ্ছে।’
কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) পরিসংখ্যান বলছে, সাংবাদিকদের কারাবন্দি করার ক্ষেত্রে ভারতও খুব শিগগিরি তুরস্ক, সৌদি, মিসর বা চীনের সঙ্গে এক কাতারে চলে আসবে। বিবিসি বাংলা।
এসএস