ইরানের পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। পরমাণু বোমা তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান উৎপাদন করা থেকে ইরান মাত্র কয়েক মাস দূরে রয়েছে- মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের এমন মন্তব্যের পর মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের প্রতিদ্বন্দ্বী তেহরানের কাছ থেকে এই বক্তব্য সামনে এলো।

সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইরানের পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। আমরা চাইলে বেশ কিছুদিন আগেই এই অস্ত্র তৈরি করতে পারতাম। কিন্তু আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এই অস্ত্র আমাদের নিরাপত্তা বাড়াবে না এমনকি এটা আমাদের আদর্শিক চিন্তাধারার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।’

এর আগে সোমবার আরেক মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, একটি পরমাণু বোমা তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান উৎপাদন করা থেকে ইরান মাত্র কয়েক মাস দূরে রয়েছে। তিনি দাবি করেন, ইরান যদি ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে ফিরে আসে তবে ওয়াশিংটনও একই কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ব্লিনকেনের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তার (ব্লিনকেন) কথায় বাস্তবতার চেয়ে জনমত ও উদ্বেগকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’

২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত রাখতে বাধ্য হয় ইরান। কিন্তু ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে একক সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে সম্প্রতি ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করে দেশটি।

জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএইএ'র পরিদর্শকরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন- সে ব্যাপারেও তখন সম্মতি দিয়েছিল তেহরান।

কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।

তবে গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় পরাশক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেন জো বাইডেন।

তবে সিএনএন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাভেদ জারিফ বলেন, পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ‘অসীম’ সময় নেই। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমে এই চুক্তিতে ফিরে আসার ঘোষণা দিতে হবে। এরপরই তাৎক্ষণিকভাবে ইরানও এই চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে সম্মতি দেবে।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘(চুক্তিতে ফেরার বিষয়ে) সময় কোনো ব্যাপার না। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন তাদের পূর্বসূরী ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থ নীতিগুলো অনুসরণ করবে নাকি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে- এটাই দেখার বিষয়।’

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিকে পাশকাটিয়ে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে আগ্রহী বলেই মনে হচ্ছে। কারণ ২০১৫ সালে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদেরই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বসাচ্ছেন জো বাইডেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- রবার্ট ম্যালে ও ওয়েন্ডি শেরম্যান। রবার্ট ম্যালেকে ইরানবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আর ওয়েন্ডি শেরম্যানকে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

ইরান অবশ্য বরাবরই দাবি করে থাকে যে, তাদের পামাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এর বাইরে পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে।

সূত্র: সিএনএন, আলজাজিরা

টিএম