রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক ও বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। স্থগিত দণ্ডের শর্তভঙ্গের অভিযোগে তাকে এই কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের কড়া সমালোচক ৪৪ বছর বয়সী আইনজীবী নাভালনিকে গত বছর আগস্টে রাসায়নিক বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিষক্রিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন নাভালনি।

পরে জার্মানির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং গত ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। কিন্তু রাশিয়ায় ফেরার পর বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হন নাভালনি। নাভালনির অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট পুতিন তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন; যদিও ক্রেমলিন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

তীব্র শীত ও পুলিশি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গত রোববার রাজধানী মস্কোসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার নাভালনি সমর্থক বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নাভালনির ২ হাজার ৭৩৭ জন সমর্থককে আটক করা হয় বলে জানায় ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী এই নেতাকে মুক্তি দিতে পুলিশকে বাধ্য করতে টানা দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো বিক্ষোভ করেন তারা।

নাভালনির বিরুদ্ধে দেওয়া সর্বশেষ রায়ে স্থগিত থাকা দণ্ড বাতিল করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ইতোমধ্যেই এক বছর তিনি গৃহবন্দি ছিলেন। এটাও কারাদণ্ডের ওই আদেশের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

এদিকে বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মামলার শুনানিতে আদালতে বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতির প্রতিবাদ করেছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, এর মাধ্যমে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, আদালতে নাভালনির শুনানিতে বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতি প্রমাণ করছে পশ্চিমারা রাশিয়ার গতিরোধ করতে চায়।

নাভালনি এর আগে কয়েকবার আটক হয়ে জামিনে মুক্ত থাকার সময় জামিনের আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। রাশিয়ার আইনে এরকম অপরাধে সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে মস্কো সিটি আদালতে অ্যালেক্সি নাভালনির বিচারের শুনানির সময় আমেরিকা, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, লাটভিয়া, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের ২০ কূটনীতিক উপস্থিত হন।

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের বাসভবন ক্রেমলিন বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যেন নাভালনির বিচারের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইইউ এ বিষয়ে সমালোচনা করে বক্তব্য দিলে মস্কো পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

চিকিৎসা শেষে জার্মানি থেকে দেশে ফিরলে আটক করা হতে পারে- এমন হুমকি উপেক্ষা করে মস্কোয় নাটকীয়ভাবে ফিরে আসার পর দেশটিতে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে; তা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়ার রাজনৈতিক মঞ্চে একক আধিপত্য ধরে রাখা পুতিন এর আগে এত দীর্ঘমেয়াদী বিক্ষোভ প্রতিবাদের মুখে পড়েননি।

কে এই নাভালনি?
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধী হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত রাজনীতিক নাভালনি। ২০১৮ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অর্থ আত্মসাতের দায়ে দেশটির বিরোধী এই নেতাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ার বিরোধী এই নেতার লাখ লাখ অনুসারী রয়েছেন। চলতি বছর সাইবেরিয়ার স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে নাভালনির কয়েকজন সমর্থক নির্বাচিত হয়েছেন।

গত বছরের আগস্টে বিষাক্ত নার্ভ অ্যাজেন্ট হামলায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেন নাভালানি। এই হামলার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেন তিনি; যদিও ক্রেমলিন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সূত্র: বিবিসি

টিএম