ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান গত বছরের তুলনায় উন্নতি হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের গণতন্ত্রের সূচকের অবনমন ঘটলেও বাংলাদেশের উন্নতি ঘটেছে। বিশ্বের ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিচার করে বুধবার ইআইইউ এই সূচক প্রকাশ করেছে। 

ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এই সূচক পাঁচটি মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। সূচকে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ চলতি বছরে ৭৬তম স্থানে আছে। গত বছর এই সূচকে ৫ দশমিক ৮৮ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম ছিল। একই সূচকে ২০১৮ সালে ৮৮তম স্থানে বাংলাদেশর স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৫৭।

ব্রিটিশ এই সাময়িকী ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক প্রকাশ করে। ওই বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। ২০০৭ সালে ৫ দশমিক ৫২, ২০০৮ সালে ৫ দশমিক ৮৭, তারপরের তিনবছর বাংলাদেশের স্কোর একই ছিল; ৫ দশমিক ৮৬। তবে এখন পর্যন্ত ইকোনমিস্টের এই প্রতিবেদনে এ বছরই সর্বোচ্চ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। 

ইআইইউ চলতি বছরের এই সূচক পাঁচটি মানদণ্ড— নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুদলীয় ব্যবস্থা, সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে। বিশ্বের ১৬৫ দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতন্ত্র পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে স্কোরের ১০ ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়।

এসব মানদণ্ড বিবেচনা করে পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র গণতন্ত্র এবং স্বৈরশাসন— এই চার শ্রেণিতে সূচক তৈরি করা হয়েছে। কোনও দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে পূর্ণ গণতন্ত্র, ৬ থেকে ৮ হলে ত্রুটিপূর্ণ, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র এবং ৪ এর নিচে হলে সেই দেশে স্বৈরশাসন জারি রয়েছে; বলছে ইকোনমিস্ট। 

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি, যুক্তরাজ্য পূর্ণ গণতন্ত্রের তালিকায় থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র আছে ত্রুটিপূর্ণ দেশের তালিকায়। 

এবারের এই সূচকে ৯ দশমিক ৮১ স্কোর নিয়ে সবার ওপরে আছে নরওয়ে। আইসল্যান্ড আছে দ্বিতীয় স্থানে, স্কোর ৯ দশমিক ৩৭। ৯ দশমিক ২৬ স্কোর নিয়ে সুইডেন আছে তৃতীয় স্থানে। এরপরই আছে নিউজিল্যান্ড (চতুর্থ), কানাডা (পঞ্চম), ফিনল্যান্ড (৬ষ্ঠ), ডেনমার্ক (৭ম), আয়ারল্যান্ড (৮ম), অস্ট্রেলিয়া এবং নেদারল্যান্ডস যৌথভাবে নবম এবং তাইওয়ান আছে দশম স্থানে।

বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার মিশ্র গণতন্ত্রের তালিকায় রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৬ দশমিক ৬১ স্কোর নিয়ে শীর্ষে আছে ভারত, দেশটির অবস্থান ৫৩তম। এরপর আছে শ্রীলঙ্কা; ৬ দশমিক ১৪ স্কোর নিয়ে দেশটির অবস্থান ৬৮তম। ৫ দশমিক ৭১ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান ৮৪, ৯২তম স্থানে থাকা নেপালের স্কোর ৫ দশমিক ২২। 

১৬৫ দেশের এই তালিকায় ৪ দশমিক ৩১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান আছে ১০৫তম স্থানে।

অন্যদিকে, এই তালিকার একেবারে তলানিতে আছে উত্তর কোরিয়া। বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন কোরীয় দ্বীপের এই দেশের স্কোর ১ দশমিক ০৮; অবস্থান ১৬৭। এরপর ১ দশমিক ১৩ স্কোর নিয়ে ১৬৬তম ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ১৬৫তম, স্কোর ১ দশমিক ৩২।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র সংকুচিত হয়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের গড় স্কোর ৫ দশমিক ৪৪ থাকলেও পরের বছর তা কমে ৫ দশমিক ৩৭ হয়েছে। ইআইইউ গণতন্ত্রের এই সূচক ২০০৬ সালে প্রকাশ শুরুর পর থেকে এবারই বিশ্বের গড় স্কোর সবচেয়ে কম।

এসএস