সু চির জন্য দুঃখ নেই তাদের
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের দিকে ছুটছেন একদল রোহিঙ্গা, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ ছবি: রয়টার্স
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানালেও বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বলেছেন, ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়া ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চির জন্য তাদের কোনও দুঃখবোধ নেই। সু চির এক সময়ের কট্টর আন্তর্জাতিক সমর্থকরাও দেশটির সেনা জেনারেলরা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ায় হতাশ হননি। তাদের পাশাপাশি দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে ২০১৭ সালের আগস্টে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গারাও বলছেন, সু চি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় তারা কোনও কষ্ট পাননি।
কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইউনুস আরমান বলেন, রাখাইনে তাদের পরিবারের সদস্যদের মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা হত্যা করেছেন অং সান সু চি ক্ষমতায় থাকাকালীন। তিনি বলেন, ‘সু চি এ ব্যাপারে তখন নীরব ছিলেন। এমনকি তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। এক সময় আমরা তার সফলতার জন্য প্রার্থনা করেছি এবং তাকে আমাদের রানি মনে করতাম। কিন্তু ২০১৭ সালের পর আমরা তার আসল চরিত্র বুঝতে পারি।’
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারের প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়ে সোমবার ভোরের দিকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে দেয়। ভোরের আলো ফোটার আগেই দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) প্রধান ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি এবং অন্যান্য নেতাদের আটক করে সেনাবাহিনী।
ওইদিন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে পার্লামেন্টের অধিবেশনে গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডির জয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘ পাঁচ দশকের স্বৈরশাসনের পর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের ১০ বছরের যাত্রা হোঁচট খায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমের আবারও সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ায়। অভ্যুত্থানের পর সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের হাতে আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে সামরিক বাহিনী।
বিজ্ঞাপন
এখন তিনি (সু চি) ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। এ নিয়ে আমাদের কোনও দুঃখবোধ নেই।
রোহিঙ্গা নেতা আরমান
কক্সবাজারের জরাজীর্ণ শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করছেন। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গারা নিজ সেখানে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে এলেও নাগরিকত্ব, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো নৃশংসতা দেখানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান জাতিগত নিধনের উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নিজেদের অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। চলতি বছরের শেষের দিকে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। গত মাসে ঢাকা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গাকে ভাষাণ চরে স্থানান্তর করেছে।
গত নভেম্বরে সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির বিশাল জয়ের পরপর সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রোহিঙ্গা নেতা আরমান আলজাজিরাকে বলেন, গত চার বছর ধরে আমরা আমাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কথা বলে আসছি। কিন্তু এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হয়নি।
থাইংখালি শরণার্থী শিবিরের আরেক রোহিঙ্গা নেতা সায়েদ উল্লাহ বলেন, নিজ দেশ মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণ করায় তারা উদ্বিগ্ন নন। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সামরিক শাসনের কবলে বসবাস করেছি। অং সান সু চির বেসামরিক সরকার আমাদের জন্য কিছুই করেনি। আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজনকে গণহত্যা করা হলেও প্রতিবাদ করেনি।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আরও বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন সায়েদ উল্লাহ। তিনি বলেন, এখন সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আছে। আমরা মনে করছি, আমাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবারও থমকে যাবে। সেনাবাহিনী আমাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেবে এমন কোনও পথ নেই।
এসএস