ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের একটি হিমবাহ ধসে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোববার সকালের দিকে প্রদেশের চামোলি জেলায় তুষারধসের কারণে সৃষ্ট বন্যায় কয়েকশ মানুষ ভেসে গেছেন। বিশাল হিমবাহের খণ্ড প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভেঙে পড়ার পর এই প্রদেশের আলাকনন্দ এবং ধাওলিগঙ্গা নদীর পানি উপচে আশপাশের কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। 

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, চামোলি জেলায় হিমবাহের বিশাল খণ্ড ভেঙে সৃষ্ট তুষারধসের কারণে আশপাশের কিছু এলাকা পানিতে ভেসে গেছে। আলকানন্দা এবং ধাওলিগঙ্গা নদী পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

তুষারধসের কারণে নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে দেশটির জাতীয় দুযোর্গ মোকাবিলা বাহিনী। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব ওম প্রকাশ বার্তাসংস্থা এএনআইকে বলেছেন, চামোলি জেলায় তুষারধসে ১০০ থেকে ১৫০ জনের প্রাণহানি ঘটতে পারে। এছাড়া তুষারের নিচে শত শত মানুষ আটকা থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। 

হিমালয়ের হিমবাহ ধসের প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেছেন, রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার উত্তরের ধাওলিগঙ্গা নদীতে পানির তীব্র গর্জন শুরু হয়েছে। পানির তোড়ে বাড়ি-ঘর ভেসে যেতে দেখেছেন তিনি।

চামোলি জেলার বাসিন্দা সঞ্জয় সিং রানা রয়টার্সকে বলেছেন, এটা খুব দ্রুতই ঘটে গেছে। কাউকে সতর্ক করে দেয়ার মতো সময় পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছিল, আমরাও ভেসে যাবো।

আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চামোলি জেলার ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ১৫০ শ্রমিক কাজ করছিলেন। হিমবাহ ধসের পর থেকে তাদের আরও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পানির তীব্র স্রোতে এই শ্রমিকরা ভেসে গিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

চামোলির রেইনি গ্রামের তপোবন এলাকায় হিমবাহ ধসের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বাঁধ ভেঙে নদীর দু’পাশের বাড়ি ঘরে পানির তীব্র স্রোত ঢুকে পড়ছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করতে ইন্দো-তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কয়েকশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

এ ঘটনার পর রাজ্যের চার জেলায় জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট।

উত্তরাখণ্ডের পুলিশের প্রধান অশোক কুমার বলেছেন, ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৫০ জনের বেশি শ্রমিক তুষারধসে মারা গেছেন। তবে প্রকল্পের বেশ কয়েকজন শ্রমিককে ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।

তুষারধসে ব্যাপক হতাহতের খবর পাওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, উত্তরাখণ্ডের পাশে আছে পুরো ভারত। প্রত্যেকের সুরক্ষার জন্য সারা দেশের মানুষ প্রার্থনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরাখণ্ডের এই ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন। 

এসএস