হাজী সেলিমের ডানে ইরফান সেলিম।

ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (অপারেশন) দেলোয়ার হোসেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শওকত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, অস্ত্র ও মাদক মামলায় ইরফান সেলিমকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। তবে তার দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লাকে অভিযুক্ত করে এই দুই মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ‘মামলাটির গোপন-প্রকাশ্য তদন্ত, সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণ ও ঘটনাস্থলের জব্দ তালিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, মামলার এজাহার ও জব্দ তালিকায় ঘটনাস্থল অভিযুক্ত ইরফান সেলিমের শয়নকক্ষ উল্লেখ করা হলেও সেটি তার শয়নকক্ষ নয়, বরং অতিথিকক্ষ। আর বাড়িটির মালিক ইরফান সেলিমের বাবা হাজী সেলিম ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য। পুরো পরিবার একটি রাজনৈতিক পরিবার বলে ওই অতিথিকক্ষে আগন্তুক অতিথি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মী আসেন। তাছাড়া অভিযুক্ত ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ায় এলাকার সাধারণ জনগণও আসেন তার সঙ্গে একান্তে দেখা-সাক্ষাৎ করতে। 

অভিযুক্ত ইরফান সেলিম ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কানাডায় বিবিএ পড়াশোনা শেষ করেছেন উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্টে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ইরফান সেলিম ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্যের উত্তরসূরি। তাই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট ও সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে কে বা কারা মামলায় জব্দ করা অস্ত্রটি ২৬ নং 'চাঁন সর্দার দাদাবাড়ী'র চতুর্থ তলার অতিথি কক্ষে রেখেছেন, যার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এলাকায় ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। 

তদন্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, এ মামলার জব্দ করা আলামত পিস্তলের বিষয়ে মামলার বাদী এজাহারে ও জব্দ তালিকায় কার অস্ত্র এবং কার দেখানো মতে জব্দ করা হয়েছে, তাও উল্লেখ করেননি। 

মামলার প্রকাশ্য ও গোপন তদন্তে, গৃহীত সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় অভিযুক্ত ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। তাই মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহিত দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। 

উল্লেখ্য,গত ২৫ অক্টোবর নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় হাজি সেলিমের ছেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের গাড়ি তাকে ধাক্কা মারে। এরপর তিনি সড়কের পাশে মোটরসাইকেল থামিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান ও নিজের পরিচয় দেন। তখন গাড়ি থেকে ইরফানের সঙ্গে থাকা অন্যরা একসঙ্গে তাকে মারধর করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এ ঘটনায় ২৬ অক্টোবর সকালে ইরফান সেলিম, তার দুই দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লা, এ বি সিদ্দিক দিপু ও গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনকে আসামি করে ওয়াসিফ আহমদ খান ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।

ওইদিন দুপুরে র‌্যাব পুরান ঢাকার চকবাজারে হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেয়। বাসায় অবৈধভাবে মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুই জনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন। 

পরের দিন ২৭ অক্টোবর র‌্যাব-৩ এর ডিএডি কাইয়ুম ইসলাম চকবাজার থানায় ইরফান সেলিম ও দেহরক্ষী জাহিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের পৃথক চারটি মামলা করেন।

টিএইচ/ওএফ