অর্থপাচার ও বিভিন্ন প্রতারণা করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারসহ সন্দেহজনক ৮৩ সহযোগীর বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা বৃহস্পতিবারের (২১ জানুয়ারি) মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন- অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

এর আগে, পি কে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) সন্দেহজনক ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ আছে বলে হাইকোর্টে জানান বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

হাইকোর্টে দাখিল করা বিএফআইইউর প্রতিবেদনে পি কে হালদার ও তার ৮৩ সহযোগী এবং ৪৩টি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের বিস্তারিত তথ্যও উঠে এসেছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে ফ্রিজ অবস্থায় রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিএফআইইউ তার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০১৫ সালে ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, বিআর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, নিউ টেক এন্টারপ্রাইজ লি. ও হাল ইন্টারন্যাশনাল লি. নামের প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণের পর ৩/৪ বছরে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও বিভিন্ন অনিয়মে নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ঋণের নামে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্যাপিটাল মার্কেটের দুই হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। আত্মসাৎ করা অর্থ বিতরণ করা ঋণের ৬৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ৪৩টি ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের নামে বিতরণ করা ঋণের অর্থের গতিপথসহ প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সার্বিক পর্যালোচনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার, ক্রেডিট ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা ৮৩ ব্যক্তির ঋণের আড়ালে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
 
এই দুর্নীতি ও জালিয়াতি মানি লন্ড্রারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত অপরাধ।

প্রসঙ্গত, চারটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা।

এই চার প্রতিষ্ঠান হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ফাস ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স।

নিজ আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীদের দ্বারা নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তিনি এই অর্থ আত্মসাৎ করে কানাডায় পালিয়ে যান। হাজার হাজার কোটি টাকা কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থপাচার নিয়েও তদন্ত অব্যাহত রেখেছে দুদক ও বিএফআইইউ।

এমএইচডি/এফআর