সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলাটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। সবকিছু পর্যালোচনা করে সঠিক নিয়মে এবং যথাযথ সময়ে র‍্যাব তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানিয়েছেন এলিট ফোর্সটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় র‍্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, মামলাটিতে পেশাদারিত্ব, কর্মদক্ষতার প্রমাণ হিসেবেই র‌্যাব তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তদন্ত কর্মকর্তা অত্যন্ত বিজ্ঞ এবং চৌকস। তার বিজ্ঞতা এবং সবকিছু পর্যালোচনা করে এ মামলা সঠিক নিয়মে যথাযথ সময়ে র‌্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবে।

র‍্যাব মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সাংবাদিক সাগর সারোয়ার এবং মেহেরুন রুনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় রুনির ছোটভাই একটি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করছে র‍্যাব। এখন পর্যন্ত ১৬০ জন আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। মামলায় মোট আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। যারমধ্যে দুজন জামিনে মুক্ত রয়েছেন এবং ছয়জন জেলহাজতে। এটা একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলায় গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক রয়েছে। কারণ, দুজনই ছিলেন সাংবাদিক দম্পতি। মামলাটির ভয়াবহতা ও স্পর্শকাতরতার কারণে র‌্যাব খুবই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।

তিনি আরও জানান, কৌশলগত কারণে অনেকবার আদালত থেকে সময় নেওয়া হয়েছে। মামলায় যে ধরনের ফরেনসিক উপাদান পাওয়া গিয়েছিল তার ডিএন পরীক্ষার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলেন। যার ‘ফল’ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছেছে। পরে এ মামলার অন্যতম আসামি তানভীর রহমান মিসকেস দায়ের করেন। যার ফলশ্রুতিতে সেটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘হত্যার বেশ কিছুদিন পর র‌্যাব মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায়। এরপর থেকে তদন্ত কাজ চলছে। তদন্তাধীন মামলা হওয়া এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা সমীচীন হবে না। তবে র‍্যাব সবাইকে আশ্বস্ত করতে চায়, মামলাটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমানে চলছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, র‍্যাব যে সময়ে তদন্তভার পেয়েছিল, সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত মামলার আলামত, তথ্য উপাত্ত সমৃদ্ধ করে তদন্ত পরিচালনা করছে। মামলায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর দিক রয়েছে। যার ফলে গুরুত্বের সঙ্গে এটা পরিচালনা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সবাই মামলাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তার পরবর্তী পদক্ষেপ আদালতে উপস্থাপন করবেন।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডস্থল পরিদর্শন করেছেন। কেন সেটা জানতে চাইলে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরির্দশনকে পুলিশের ভাষায় পিও বলা হয়। এটা তার রুটিন কাজ। ঘটনার পর এবং বর্তমান পরিস্থিতি এ দুটো পরিস্থিতি অবলোপন করতে তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।

ফরেনসিক রিপোর্টে কয়জনের ডিএন তথ্য এসেছে জানতে চাইলে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সর্বমোট ২৫ জনের ডিএন পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছেছে।

কোনো কারণে কি র‍্যাব এটা নিয়ে এগোতে পারছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা র‍্যাবের দায়িত্ব। যেহেতু এটি একটি চ্যাঞ্চল্যকর মামলা, এ মামলাটি র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সুতরাং মামলাটিকে নিজেদের পেশাদারিত্ব, কর্মদক্ষতার প্রমাণ হিসেবেই র‌্যাব দায়িত্ব পালন করছে।

সাগর-রুনীর ডিএনএসহ ২৫ জনের মধ্যে বাকি ২৩ জনের ডিএনএ শনাক্ত করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মামলার ডিএনএ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। মামলাটি যেহেতু তদন্তাধীন বিষয়, এ বিষয়ে এতটুকুই বলা সম্ভব।

তদন্ত প্রতিবেদন কবে নাগাদ দেওয়া সম্ভব হতে পারে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ১১ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজ করছেন এবং বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে র‍্যাব মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানসহ তার নির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা যিনি আছেন তিনি অত্যন্ত চৌকস জানিয়ে এ র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আগের যে ধরনের পরিস্থিতি ও বাস্তবতার মধ্যে আমরা দায়িত্ব শুরু করেছি সেখান থেকে বর্তমান অবস্থানে আসা এটি তদন্তকারী কর্মকর্তার বিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং র‍্যাব আস্থার সঙ্গে জানাতে চায়, মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং যথানিয়মে তদন্তটির ফল আদালতে দাখিল করা হবে।

আশিক বিল্লাহ বলেন, ২৫ জনের ডিএনএ'র পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে রক্ত, রক্তমাখা জামা-কাপড়সহ সবধরনের আলামত আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। সর্বাধুনিকভাবে একটি প্রযুক্তি আছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অভিযুক্ত আসামির একটি অবয়ব তৈরি করা যায়। এ বিষয়টি নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজ করছেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে মামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাব।

সর্বশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য আগামী ১১ মার্চ দিন ধার্য করা হয়।

এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন- মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মামুন, মো. কামরুল হাসান অরুণ, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ, এনাম আহাম্মদ ওরফে হুমায়ুন কবির, পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান।

আসামিদের মধ্যে পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান জামিনে আছেন। বাকিরা কারাগারে আছেন।

এমএসি/এসএম