বেড়া-কাঠে দাঁড়াচ্ছে বইমেলার স্টলগুলো/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

করোনার কারণে শুরুতে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও অনেক নাটকীয়তা শেষে আগামী ১৮ মার্চ শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। এ মেলা চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে এবার এ মেলা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজিত হবে। তাছাড়া করোনা এবং বৈশাখী ঝড়ের বিষয়টি মাথায় রেখে নেওয়া হবে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।

মেলা শুরু হতে মাত্র ছয় দিন বাকি। চলছে স্টল নির্মাণের প্রস্তুতি। কাঠ কাটা, জোড়া দেওয়া, আর পেরেক-হাতুড়ির টুং টাং শব্দে সরব সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। পুরোদমে চলছে স্টল নির্মাণ ও সাজসজ্জার কাজ। এবার প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুটের বিশাল জায়গায় বিস্তৃতি পাচ্ছে বইমেলা; যা গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। গতবারের তথা ২০২০ সালে বইমেলার আয়োজন হয়েছিল প্রায় সাড়ে সাত লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরোদমে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। সেজন্য শাহবাগ থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে দোয়েল চত্বর। এ কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং এটা মেনে নিয়েই হবে এবারের মেলা। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিবেচনায় থাকবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি।

স্টল নির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

সোমবার (৮ মার্চ) বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে মেলার স্টল বরাদ্দের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের বইমেলায় অংশ নেবে ৫২২টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। সবমিলিয়ে মেলায় স্টলের ইউনিট দাঁড়াবে আট শতাধিক। যেখানে গত বছর স্টল সংখ্যা ছিল ৫৩৮টি। এছাড়াও এক হাজার ৮১৭টি ইউনিট এবং ৩৩টি প্যাভিলিয়ন থাকবে এবারের বইমেলায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে থাকবে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর।

প্রতিবছর বইমেলায় বিক্রয়কর্মী থেকে শুরু করে পাঠক, স্কুল -কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশগ্রহণ থাকে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। মার্চের শেষ দিকে স্কুল-কলেজ খুললেও বন্ধ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এছাড়া এবার মেলা চলাকালীন কাল বৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কাও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রকাশকরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হলেও মেলা নিয়ে তারা আশাবাদী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনীর প্রকাশক আনিস সুজন বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, এবারের মেলায় অনেক পাঠকের সমাবেশ হবে। যেখানে এ বছর বইমেলা হওয়ারই কোনো কথা ছিল না, সেখানে বইমেলা হচ্ছে এটাই বড় কথা। পাঠক শ্রেণি একটি বড় অংশ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে প্রথম দিকে পাঠকের আনাগোনা একটু কম হলেও যেহেতু ৩০ তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে, এর পর থেকেই মেলা জমে উঠবে।’

ছবি: ঢাকা পোস্ট

অন্বয় প্রকাশনীর প্রকাশক হুমায়ুন কবির ডালি বলেন, ‘মেলায় বড় অংশগ্রহণকারী হলো শিক্ষার্থীরা। ৩০ তারিখ স্কুল কলেজ খুললেও বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে না। সেক্ষেত্রে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। যেহেতু করোনার প্রকোপ ইতোমধ্যে অনেক কমে গেছে। আমরা আশাবাদী, সবকিছু মিলিয়ে এবার একটি ভালো মেলাই হবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীই এবারের অমর একুশ গ্রন্থমেলার মূল থিম (প্রতিপাদ্য)। আমরা ইতোমধ্যে স্টল বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছি, প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। আশা করছি, ভালো একটি বইমেলা আমরা উপহার দিতে পারব।’

স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কী ব্যবস্থা থাকছে- জবাবে তিনি বলেন, ‘মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার ভিড় এড়াতে স্টলের সামনে ফাঁকা জায়গা থাকছে বেশি; স্টলের দূরত্বও বাড়ানো হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তাছাড়া প্রবেশপথে থাকবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার।’

এফআর