পাইকারি পণ্য কেন্দ্র চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজের সমারোহ/ ঢাকা পোস্ট

ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি পণ্য কেন্দ্র চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বেড়েছে দেশীয় পেঁয়াজের দাম। গত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারির দিকে এ বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেটি এখন দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ ৪২-৪৩ টাকায় বিক্রি হলেও শনিবার (১৩ মার্চ) ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ দুদিনের ব্যবধানে কেজিতে এ পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রায় পাঁচ টাকা। তবে চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৩৮-৪০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় খাতুনগঞ্জে বেড়েছে রসুনের দাম। আমদানি করা রসুন গত সপ্তাহে ৯৫ টাকায় কেজি বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকা।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস ঢাকা পোস্ট-কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজকে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ ৪২-৪৩ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ২২-২৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বেড়ে ৩২ টাকা হয়েছে। এর মূল কারণ, দেশের মুড়িকাটা পেঁয়াজ শেষের দিকে।’

কিছুটা কমলেও ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের দাম এখনও বেশি কেন- জবাবে ইদ্রিস বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতেছে। ভারত থেকে ক্রয় করার সময় দাম বেশি পড়ার কারণে এখানে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমদানি করা রসুন গত সপ্তাহে ৯৫ টাকা করে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকা।’

খাতুনগঞ্জের মেসার্স মাহিন ট্রেডার্সের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ আজকে বিক্রি করতেছি ৩৮ টাকা করে। প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এসেছে।’

প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে খাতুনগঞ্জে/ ঢাকা পোস্ট

কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেন- জবাবে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কিছুটা কম দামে বিক্রি হয়েছিল। এখন বাজারে দেশি পেঁয়াজ কম, তাই বাড়ছে। আমরা কমিশনে পেঁয়াজ বিক্রি করি। আমদানিকারকদের বেঁধে দেওয়া মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।’

মেসার্স শাহাদাত অ্যান্ড ব্রাদার্সে গিয়ে দেখা যায়, ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা করে। আমদানিতে দাম বাড়ার কারণে রসুনের দাম বাড়ছে জানান এ দোকান মালিক।

সরেজমিনে খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজ দেখা গেছে। অল্প পরিমাণে ছিল দেশি পেঁয়াজ।

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা এলাকায় ভ্যানে করে পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন কাদের মিয়া। তিনি ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘আজকে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা করে বিক্রি করছি।’

রিয়াজউদ্দিন বাজারের একটি দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকায়। এ বাজারে আসা সারোয়ার আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বাজারে মূল্য তালিকা টানানোর কথা থাকলেও তা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা দরকার। পেঁয়াজের দাম অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে ১৫ টাকা বেড়েছে কেজিতে।’

ঢাকায় পেঁয়াজের দাম কেমন?

রাজধানীতে বুধবার (১০ মার্চ) কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ টাকা। বৃহস্পতিবার ছিল ৪৫ টাকা। শুক্রবার রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে একই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে।

সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। কোনো কারণ ছাড়াই হু হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় হতবাক ক্রেতারা। তারা বলছেন, রমজানের আগেই কৌশলে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বাড্ডা পোস্ট অফিস গলি এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বুধবার ৩৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সেই পেঁয়াজ ৪৩ টাকা কেজিতে শ্যামবাজার থেকে কিনেছি। তাই খরচসহ পেঁয়াজের কেনা দাম পড়েছে ৪৭ টাকা। ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।’

কয়দিন হলো পেঁয়াজের উৎপাদনের মৌসুম শেষ হয়েছে। এ সময় পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর যৌক্তিক কোনো কারণ বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, রোজার আগেই পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর কয়েকটি খুচরা, পাইকারি ও বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আজ এক কেজি ভালোমানের দেশি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। যদিও কিছু দোকানে ৪৫ টাকাতেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। সপ্তাহখানেক আগেও দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও এক মাসের ব্যবধানে ১৫ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কেএম/এফআর/এমএমজে