হজ ও ওমরাহ করতে যাওয়া বাংলাদেশিদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে সহযোগিতা চেয়েছেন সৌদি আরবের জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম।

গত ২৩ জানুয়ারি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠান তিনি।

চিঠিতে বলা হয়, ২০২২ সালের হজ পরবর্তী সময়ে পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য বাংলাদেশ থেকে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যক মুসলিম সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগ পান। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকেও ব্যাপকহারে ওমরাহ যাত্রী সৌদিতে যান। ফলে হারাম এলাকা এবং হারাম সংলগ্ন এলাকাগুলোতে সম্প্রতি অত্যন্ত জনাকীর্ণ হয়ে পড়েছে। 

বিপুল সংখ্যক ওমরাহ যাত্রী এবং তাদের পরিবহনকারী যানবাহনের সমাগমে হারাম এলাকায় চলাচল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রথমবার সৌদি আরবে আসা ওমরাহ-যাত্রীরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

গত কয়েক মাসে ১২৩ জন বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং অসংখ্য ওমরাহ যাত্রী হারিয়ে যাওয়া বা নিখোঁজ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। হারিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ওমরাহ-যাত্রীরা গাইডের নিয়ন্ত্রণে গ্রুপে চলাচল না করে একাই চলাচলের চেষ্টা করেন। ওমরাহ-যাত্রীরা হোটেল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় অনেকক্ষেত্রেই নিজস্ব পাসপোর্ট সঙ্গে রাখেন না। তাছাড়া আবাসিক হোটেলের বা ওমরাহ কোম্পানির কোনো তথ্য সঙ্গে না নিয়েই অনেক সময় হোটেল থেকে একাকী বেরিয়ে পড়ছেন এবং হোটেলে ফেরত না যেতে পেরে হারিয়ে যাচ্ছেন।

হজ কাউন্সিলর জানান, হারিয়ে যাওয়া ওমরাহ যাত্রীদের খুঁজে পাওয়া যেমন দুরূহ, তেমনি হারানো ব্যক্তির কেউ সাক্ষাৎ পেলেও তাকে তার হোটেলে পৌঁছে দেওয়াও কঠিন। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অনুসন্ধানের জন্য অনেকক্ষেত্রেই স্থানীয় থানায়, হাসপাতালে এবং অন্যান্য সম্ভাব্য স্থানে ভ্রমণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। জেদ্দা থেকে মক্কা ও মদিনায় গমন করে স্বল্পসংখ্যক জনবল এবং সীমিত জ্বালানি দিয়ে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়ছে।

জহিরুল ইসলাম বলেন, হারিয়ে যাওয়া ওমরাহ যাত্রীদের অভিভাবক, নিকটাত্মীয় ও পরিচিতজন এ কার্যালয়কে (হজ অফিস) হারানো ব্যক্তির অনুসন্ধানের জন্য নানারূপে চাপ সৃষ্টি করছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুঁজে না পাওয়ার কারণে অফিসকে দায়ী করছেন। 

ওমরাহ যাত্রীদের হারিয়ে যাওয়ার সংখ্যা কমাতে সুপারিশ তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, ওমরাহ যাত্রীদের গ্রুপভিত্তিক সৌদি আরবে পাঠানো যেতে পারে। মক্কা, মদিনার রাস্তাঘাট চেনেন এবং আরবি ভাষা বুঝেন এমন গাইড সঙ্গে থাকতে হবে। 

এছাড়া সৌদি আরবে আসার পর ওমরাহ যাত্রীদের স্থায়ী ঠিকানা, জরুরি যোগাযোগের মোবাইল নম্বর, মক্কা, মদিনায় আবাসিক হোটেলের ঠিকানা, ফোন/মোবাইল নম্বর, মক্কা ও মদিনায় ওমরা এজেন্সির প্রতিনিধির নাম ও মোবাইল নম্বর ইত্যাদি উল্লেখিত ছবিসহ আইডি কার্ড আবশ্যিকভাবে সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখতে হবে। যাত্রীদের পাসপোর্ট সাবধানতার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো কারণে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ হজ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল থেকে ট্রাভেল পারমিট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ১০৫ সৌদি রিয়াল ফি দিতে হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।

একই সঙ্গে ওমরাহ যাত্রী মারা গেলে মরদেহ সৌদি আরবে দাফন কিংবা দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার উপায়ও চিঠিতে জানিয়েছেন হজ কাউন্সিলর।

বাংলাদেশ থেকে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যাওয়া ওমরাহ যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং তাদের সার্বিক সেবা নিশ্চিতে জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিসের জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

ওএফএ/এমএ