কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অদক্ষতা টেকসই বন উন্নয়নের প্রতিবন্ধক
বনকেন্দ্রিক দুর্নীতিতে একশ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ও অদক্ষতা টেকসই বন উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
একইসঙ্গে বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। রোববার (২১ মার্চ) আন্তর্জাতিক বন দিবস উপলক্ষে টিআইবির পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। ‘বন পুনরুদ্ধার : উত্তরণ ও কল্যাণের পথ’ প্রতিপাদ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বন ও বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম হলেও তা সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থার ঘাটতি দৃশ্যমান। বনের জমিতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা, সুন্দরবনসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সন্নিকটে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বনের আশেপাশের জমি সরকারি ও বেসরকারি শিল্প কারখানা এবং স্থাপনা তৈরিতে বরাদ্দ প্রদান, বনকেন্দ্রিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও বনের জমি জবরদখলের মাধ্যমে বন ধ্বংসের বহুমুখী ঝুঁকি তৈরি করা হয়েছে। এতে বনজ সম্পদ ও বনভূমির অবক্ষয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। যা জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
টিআইবি জানায়, গত ১৭ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৬৬ বর্গকিলোমিটার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট ধ্বংস করা হয়েছে। আর বন বিভাগের হিসাবে সারা দেশে দখল হয়ে গেছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৩ একর বনভূমি। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি।
বিজ্ঞাপন
টিআইবি মনে করে, বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় বন অধিদফতরের ভূমিকা সত্যিকার অর্থেই হতাশাব্যঞ্জক। বন অধিদফতর কর্তৃক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বনকেন্দ্রিক দুর্নীতিতে অধিদফতরের একশ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ও অদক্ষতা টেকসই বন উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সরকারি বনভূমির সুরক্ষা ও বনের জনগোষ্ঠীর প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে বন অধিদফতরের ওপর অর্পিত যে ক্ষমতা এবং সক্ষমতা রয়েছে, দুটোরই তারা কার্যকর ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার করতে পারছে না।
টিআইবি বলে, জলবায়ু পরিবর্তনে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হয়েও সুন্দরবনের সন্নিকটে এবং পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্ভরশীলতা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা ও বন সংরক্ষণের বিপরীত নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৮০ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির নামে সুন্দরবনের সন্নিকটে এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাণ ও প্রকৃতিবিরোধী কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ শিল্প কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে, যা পরিবেশ আইন ১৯৯৫ এর ধারা ৫ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে করণীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক বন দিবস-২০২১ উপলক্ষে টিআইবি ১২ দফা দাবি উত্থাপন করে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, বনভূমি এবং সুন্দরবনসহ সব বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ; উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে সংরক্ষিত বনভূমির জমি বরাদ্দ ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা; রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে বনভূমি ব্যবহার ও ডি-রিজার্ভের পূর্বে বন অধিদফতরের অনুমতি গ্রহণ, বনের আশেপাশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ যে-কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা উল্লেখযোগ্য।
আরএম/এসকেডি