করোনাভাইরাসের কারণে এবার ফেব্রুয়ারির বইমেলা শুরু হয়েছে মার্চে। তারপরও রেহাই মিলছে না করোনার ছোবল থেকে। মেলা শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন লেখক, প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মী ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। যদিও মেলায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মনে করে এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না আক্রান্তরা।

প্রকাশকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে মেলার সময় কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এখন প্রকাশক, লেখক ও বিক্রয়কর্মী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন- এমন খবর প্রকাশ হলে মেলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই বিষয়টি গোপন রাখাই অধিক যৌক্তিক বলে মনে করছেন তারা।

বইমেলা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত প্রকাশক-লেখক এবং বিক্রয়কর্মীসহ প্রায় ১৫ জন করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্য প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম, আহমদ পাবলিশার্স হাউজের প্রকাশক মিজবাহ, বিজয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী তপন, পাঞ্জেরী প্রকাশনীর কামরুল হাসান শায়ক ও লেখক মোশতাক আহমেদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত বাকিদের নাম জানা যায়নি।

সরেজমিনে আজ মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রত্যেক দর্শনার্থীই মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। কিন্তু ঢোকার পরই মাস্ক খুলে ঘোরাঘুরি করেন। অনেক বিক্রিয়কর্মীকেও মাস্ক মুখ থেকে নামিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেলায় আসা প্রত্যেক ব্যক্তিকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শুধু লোক দেখানো মাস্ক ব্যবহার করলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। বিষয়টি যাতে যথাযথভাবে পরিপালন করা হয় সে জন্য কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি করোনা আক্রান্ত হয়েছি। তবে মেলাতেই যে আক্রান্ত হয়েছি, এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা ঠিক হবে না। কারণ আমি তো মেলার বাইরে অন্য জায়গাও গিয়েছি।’

অন্যদিকে, লেখক মোশতাক আহমেদ করোনা আক্রান্তের বিষয়টি নিজেই ফেসবুকে জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, এতে প্রকাশক, লেখক ও বিক্রয়কর্মীসহ ২০ জনের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে অনেক প্রকাশক মেলায় আসছেন না। তারা বিক্রয়কর্মী দিয়ে স্টল চালাচ্ছেন।’

বইমেলায় প্রবেশ করেই অনেকেই খুলে ফেলছেন মাস্ক

বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মেলার শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে বাংলা একাডেমি। মেলার প্রতিটি গেটেই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দর্শনার্থী প্রবেশ করানো হচ্ছে। মেলার গেটে মাস্ক পরিধান, শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে প্রবেশ করানো হচ্ছে। একইসঙ্গে মেলায় মুহূর্তে-মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে।’

এদিকে, করোনার কারণে এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত কোনো খ্যাতিমান প্রবীণ লেখক আসেননি। এবারের মেলায় প্রখ্যাত লেখক অধ্যাপক জাফর ইকবালের নতুন তিনটি বই এলেও তিনি এখন পর্যন্ত একদিনও আসেননি।

মেলায় অংশগ্রহণকারী তাম্রলিপি প্রকাশনীর পরিচালক সেঁজুতি জানান, জাফর স্যার সম্ভবত এবার মেলায় আসবেন না। যে কারণে তার বিপুল পরিমাণ ভক্ত-অনুসারীও মেলা বিমুখ রয়েছেন।

বইমেলার সময়সূচিতে পরিবর্তন

দেশের ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতিতে অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এর সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বুধবার (৩১ মার্চ) থেকে নতুন সময়সূচি কার্যকর হয়।

নতুন সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন বইমেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং শেষ হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলা একাডেমির তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের (জনসংযোগ) পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী।

করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি
 
উল্লেখ্য, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দেশে এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে ২০২০ সালের ৩০ জুন এক দিনে ৬৪ জন মারা গিয়েছিলেন। এ নিয়ে করোনায় দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ১০৫ জনে। নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৪৬৯ জন। এ নিয়ে সর্বমোট শনাক্তের সংখ্যা ছয় লাখ ১৭ হাজার ৭৬৪ জন।
 
এএইচআর/এসকেডি/এফআর