শীতের সকালে ভোটযুদ্ধ ২৪ পৌরসভায়
রংপুরের বদরগঞ্জের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন
প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে এ ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আনুষ্ঠানিকভাবে এ ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে শীতের সকালে ২৪ পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটের লড়াই শুরু হলো।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, করোনা মহামারির মধ্যেও ইভিএমের মাধ্যমে পাঁচটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, ঢাকা-৫ আসনে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং নওগাঁ-৬ আসনে ৩৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ ভোট পড়ে।
সর্বশেষ ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৪ শতাংশ ভোটার। তবে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পড়ে। এছাড়া ব্যালট পেপারে যশোর-৬ আসনে ভোট পড়ে ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। বন্যার মধ্যেও বগুড়া-১ আসনে ভোট দেয় ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার। দুটি আসনে গড়ে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ২৪টি পৌরসভায় মেয়র পদে ৯৩ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৬৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮০১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথম ধাপের এ নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। ২৪টি পৌরসভার মধ্যে ২৩টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজশাহীর পুঠিয়ায় মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
ইসি জানিয়েছে, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে কমিশন। নির্বাচন উপলক্ষে রোববার (২৭ ডিসেম্বর) প্রত্যেক কেন্দ্রে ইভিএম পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। পাশাপাশি রয়েছে শঙ্কাও। বেশ কয়েকটি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলদের সমর্থকদের মধ্যে গত কয়েকদিনের সংঘর্ষ এ শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাতে কুষ্টিয়ায় দুজন নিহত হয়েছেন।
ইসি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোটে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে নির্বাচন উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্রাক ও পিকআপ চলাচলেও বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনের গাড়ি এবং হাইওয়েতে চলাচলকারী গাড়ি এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
ইসির যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, ২৪টি পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩১৯টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ২৪ হাজার ৮০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৭ হাজার ৩৭ জন এবং নারী ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৭০ জন।
ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এক হাজার ২৭৬ জন পুলিশ, ২ হাজার ৮৭১ জন আনসার, ৭২টি র্যাবের টিম, ৫০ প্লাটুন বিজিবি, মোবাইল ফোর্স ৭২টি এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স ২৪টি মোতায়েন থাকছে।
ইসির যুগ্মসচিব আসাদুজ্জামান
যে ২৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে- পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর; ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ; দিনাজপুরের ফুলবাড়ী; রংপুরের বদরগঞ্জ; কুড়িগ্রামের কুড়িগ্রাম সদর; রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী; সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর; পাবনার চাটমোহর; কুষ্টিয়ার খোকসা; চুয়াডাঙ্গার চুয়াডাঙ্গা সদর; খুলনার চালনা; বরগুনার বেতাগী; পটুয়াখালীর কুয়াকাটা; বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ; ময়মনসিংহের গফরগাঁও; নেত্রকোনার মদন; মানিকগঞ্জের মানিকগঞ্জ সদর; ঢাকার ধামরাই; সুনামগঞ্জের দিরাই; মৌলভীবাজারের বড়লেখা; হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড।
গত ২২ নভেম্বর প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। কিন্তু গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি।
দেশে পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। প্রথম ধাপের মাধ্যমে পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হলো। ইতোমধ্যে তিন ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৬ জানুয়ারি ৬১ পৌরসভায় এবং তৃতীয় ধাপে ৬৪ পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এসআর/এফআর