দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। করোনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা রাজধানী ঢাকায় লকডাউন বাস্তবায়নে সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই কার্যকরে মাঠে নামবে ডিএমপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। সর্বশেষ শুক্রবার (২ এপ্রিল) রাজধানীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩৬ জন মারা গেছেন।

গত বছর করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ফ্রন্টফাইটারের ভূমিকায় সক্রিয় ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমিপ)। এবারও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সক্রিয় থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীটি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) কৃষ্ণ পদ রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের হাতে এখনও প্রজ্ঞাপন পৌঁছায়নি। প্রজ্ঞাপনে অনেকগুলো নির্দেশনা চলে আসবে। কার কী দায়িত্ব থাকলো সে অনুসারে আমরা ব্যবস্থা নেব।

এছাড়া আর কোনো উপায় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কারণ সংক্রমণ দিনদিন বাড়ছে। লকডাউনের পরিস্থিতির জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।

শনিবার (৩ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহ সারাদেশে লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধ করতে সরকার ২-৩ দিনের মধ্যে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের চিন্তা করছে। যেসব প্রতিষ্ঠান জরুরি সেবা দেয় সেই ধরনের প্রতিষ্ঠানগু‌লো লকডাউন চলাকা‌লে খোলা থাক‌বে। এছাড়া শিল্প-কলকারখানাও খোলা থাক‌বে, যা‌তে শ্রমিকরা শিফ‌টিংয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারে।

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এরইমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটনকেন্দ্র। বাতিল করা হচ্ছে হোটেল-মোটেলে আগাম নেওয়া বুকিং। পাশাপাশি নতুন বুকিংও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সরকার থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। সবশেষ চলতি বছরের ২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ৯ হাজার ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জন।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ২৮ লাখ ৫১ হাজার ২৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার ২৬৮ জন।

গত বছরের শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই জারি করা হয় লকডাউন। এতে থমকে যায় দেশগুলোর অর্থনীতির চাকা। বাংলাদেশেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে জেলাভিত্তিক চলাচল সীমিত করা হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে বিভিন্ন দেশ শর্তসাপেক্ষে লকডাউন তুলে নেয়। এরইমধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিষেধক টিকাও প্রয়োগ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে।

জেইউ/জেডএস