প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরাতন ছবি

মহামারি করোনার বছর হিসেবে চিহ্নিত বিষাদময় ২০২০ সাল বিদায় নিয়েছে। মহামারির বিষাদ দূর করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরকে স্বাগত জানিয়েছে দেশবাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আতশবাজি, ফানুস ওড়ানোসহ নানা আয়োজনে পুরনো বছরের শেষ ও নতুন বছরের সূচনাকে স্বাগত জানিয়ে দেশের সব প্রান্তের মানুষ। রাজধানী ঢাকায়ও সেই দৃশ্য দেখা গেছে। 

থার্টি ফার্স্ট নাইটে দেশব্যাপী র‌্যাবের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ অভিযানিক পরিস্থিতি জোরদার করে র‌্যাব। 

র‌্যাবের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল, থার্টি ফার্স্ট নাইটে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেও অনুরোধ করা হয়েছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়িসহ সব ধরনের যানবাহন তল্লাশি করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন চেকপোস্টে ডগস্কোয়াডও সক্রিয় রাখা হয়।

নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের সব মানুষ।

থার্টি ফার্স্ট নাইটে দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল।

বর্ষবরণ ও বিদায় ঘিরে টানা তিনদিনের ছুটি শুরু হয়েছে।

পর্যটনকেন্দ্রে ছিল পর্যটকদের ভিড়।

নতুন বছর ২০২১ উপলক্ষে ৩১ ডিসেম্বর এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতির নিয়মেই যেমন নতুনের আগমনী বার্তা আমাদের উদ্বেলিত করে, তেমনি অতীত-ভবিষ্যতের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পুরনো স্মৃতি-সম্ভারে হারিয়ে যাওয়ার চিরায়ত স্বভাব কখনও আনন্দ দেয়, আর কখনো বা কৃতকর্মের শিক্ষা নব-উদ্যোমে সুন্দর আগামীর পথ চলার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে ধর্মীয় উগ্রবাদসহ যেকোনো সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। 

প্রধানমন্ত্রী সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আসুন আমরা নতুন বছরে প্রতিজ্ঞা করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রেখে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করব। 

তিনি বলেন, ২০২০ সালে বাঙালি জাতির জীবনে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। শত বছর আগে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা এক ছোট্ট খোকা কালক্রমে হয়ে উঠেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর সারা জীবনের আত্মত্যাগ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার জন্ম-শতবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা ২০২০-২১ সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছি। কিন্তু এরইমধ্যে করোনা মহামারি বিশ্বকে যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। অন্যান্য দেশের মতো আমরাও পূর্বঘোষিত পরিকল্পনা সীমিত পরিসরে চালু রেখে এ মহামারি থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে জীবনযুদ্ধে নেমেছি।

এদিকে বর্ষবরণ ও বিদায় ঘিরে টানা তিনদিনের ছুটি শুরু হয়েছে। ছুটি কাটাতে কক্সবাজারে ভিড় জমান হাজার হাজার পর্যটক। বছরের শেষ সূর্যাস্ত তারা অবলোকন করেন। সেখানে মোতায়েন রাখা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। দেশের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রেও ছিল পর্যটকদের ভিড়।

চীনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের তিন মাসের ব্যবধানে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ২০২০ সাল জুড়ে সেই আতঙ্ক, মৃত্যু গ্রাস করেছিল সব স্বাভাবিকতা। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার ১০ মাসে শনাক্ত রোগী ৫ লাখ ছাড়ায়। বছরের শেষ দিনে তথ্য পাওয়া যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে করোনা জয়ের প্রত্যাশা করেছেন দেশবাসী।

পিএসডি/এইচকে