ডিএনএনসিসি এলাকার সড়কে এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পের উদ্বোধন

‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এলইডি সড়ক-বাতি সরবরাহ ও স্থাপন’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘ডিএনসিসি এলাকায় এলইডি লাইট স্থাপন নগরবাসীর জন্য ডিএনসিসির পক্ষ থেকে নববর্ষের (ইংরেজি নতুন বর্ষ) উপহার’।

শুক্রবার (১ জানুয়ারি) প্রকল্পের উদ্বোধনের আগে আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (আইএবি) মিলনায়তনে এ কথা বলেন তিনি।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের শুরুতে ৪২ হাজার এলইডি লাইট স্থাপনের কথা থাকলেও সমপরিমাণ অর্থ ব্যয়ে আমরা ৪৬ হাজার ৪১০টি লাইট স্থাপন করব। কোনো প্রকল্পে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। প্রতিটি লাইটের আয়ুষ্কাল ২২ বছর। প্রতিটি লাইট ইউরোপ থেকে আনা হয়েছে। এই লাইটগুলো চোখের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। যা বুয়েট থেকে পরীক্ষা করে এর নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এই লাইটগুলো পরিবেশ বান্ধবও বটে।’

গতকাল ওয়াসা থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে খাল হস্তান্তর করায় ডিএনসিসি মেয়র প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘খালের উন্নয়নে সকল কাউন্সিলরসহ একসঙ্গে কাজ করব। যারা অবৈধভাবে খালের জায়গা দখল করে আছে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা দ্রুত দখল ছেড়ে চলে যান, দখল করে রাখতে পারবেন না। সিএস দাগ দেখে খালের সীমানা নির্ধারণ করা হবে।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রার যে উদ্যোগ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নিয়েছে তা আজকে শুরু হলো। ঢাকা শহরে অনেক সমস্যা ছিল, অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। আগামীতে ঢাকা শহরকে একটি দৃষ্টিনন্দন ও বসবাস উপযোগী শহরে রূপান্তরিত করার জন্য স্ব-স্ব অবস্থান থেকে কাজ করব। বাংলাদেশের উন্নতির যে স্বপ্ন দেখেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সে দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী পালন ও বাস্তবায়ন করে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা স্ব-স্ব অবস্থান থেকে কাজ করলে শুধু ঢাকা নয়, পুরো বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে পারব।’

অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনের সামনের সড়কে অ্যাপসের মাধ্যমে এলইডি সড়ক-বাতি স্থাপন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, এলইডি সড়কবাতি সরবরাহ স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম

একনজরে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এলইডি সড়কবাতি সরবরাহ ও স্থাপন’ প্রকল্প-

এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৬৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সকল বাতি স্থাপন সম্পন্ন হবে। সড়ক বাতি ৪৬ হাজার ৪১০টি; এলইডি ফিটিংস ৪৬ হাজার ৪১০টি; লাইট কন্ট্রোল ইউনিট ৪৬ হাজার ৪১০টি; ডাটা কমিউনিকেশন ইউনিট (ডিসিইউ) ৮৩১টি; বিভিন্ন ধরনের পোল ছয় হাজার ৬৯৪টি এবং অ্যালুমিনিয়াম নেট তার ৩৬ লাখ ২০ হাজার ১৯৮ মিটার।

এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে ২০টি হাইড্রোলিক ল্যাডার ক্যারিয়ার, ২০টি মোটরসাইকেল, ১০টি ডাবল-কেবিন পিক আপ, ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ অফিস ইকুইপমেন্ট, বিভিন্নরকম টুলস এবং সেফটি ডিভাইস উল্লেখিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের মোট বাতি থাকবে ১৫০ ওয়াট তিন হাজার ৪০৮টি, ১২০ ওয়াট তিন হাজার ৬৪৬টি, ৯০ ওয়াট তিন হাজার ২৯টি, ৬০ ওয়াট ১০ হাজার ৬৬৬টি, ৪০ ওয়াট ২৫ হাজার ৬৬১টি সহ মোট ৪৬ হাজার ৪১০টি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিএমটিএফ)।

এই সড়ক বাতিগুলোর বৈশিষ্ট্যর মধ্যে রয়েছে- সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করতে আধুনিক টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও স্মার্ট এলইডি সড়ক-বাতি। বিশ্বখ্যাত ফিলিপস, পোল্যান্ডে প্রস্তুতকৃত স্মার্ট এলইডি লাইটসহ কন্ট্রোলিং ডিভাইস থাকছে। প্রতিটি বাতিতে পাঁচ হাজার ৭০০ কেলভিন আলো, যা দিনের মতো স্বচ্ছ আলো দেবে। বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে না, তবে আলোর মান বাড়বে। প্রতিটি বাতির ১০ বছরের ওয়ারেন্টি রয়েছে। বিএমটিএফ আগামী ৫ বছর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। প্রতিটি বাতির আয়ুষ্কাল এক লাখ ঘণ্টা। সেন্ট্রাল মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে বাতিগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে অন-অফ, আলো কমানো (ডিমিং) যাবে। কোথাও কোনো বাতি বন্ধ থাকলে কেন্দ্র থেকে সেটির অবস্থান জানা যাবে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে বাতির কন্ট্রোলিং সিস্টেমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পাওয়ার লাইন কমিউনিকেশন (পিএলসি) নির্ভর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে বাতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

এএসএস/এফআর