মাত্র আট মাসের মধ্যে প্রায় ৫০৪ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে করোনা মোকাবিলায় ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। 
 
গণভবন থেকে বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে শেরে-বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের অন্য সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।

ভ্যাকসিন কেনার প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে পাঁচ হাজার ৬৮৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। যা প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রায় ৫০৪ শতাংশ বেশি। প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ছয় হাজার ৮১৫ কোটি টাকা

সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে পাঁচ হাজার ৬৮৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। যা প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রায় ৫০৪ শতাংশ বেশি। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হবে ৬ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। 

প্রকল্পটিতে বিশ্ব ব্যাংক ও চীনের সংস্থা এআইআইবি’র ঋণ থেকে ছয় হাজার ৬০৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল এক হাজার ১২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
 
প্রকল্পের আওতায় শুধু ভ্যাকসিন ক্রয় ও সংরক্ষণ বাবদ খরচ হবে চার হাজার ৩১৪ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা। তবে প্রকল্প প্রস্তাবে ভ্যাকসিনের সংখ্যা ও এককমূল্য উল্লেখ করা হয়নি। 

এর আগে করোনা মোকাবিলায় বিশ্ব ব্যাংকের জরুরি ঋণ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। সে সময় প্রকল্পটি ‘খুব জরুরি’ বিবেচনায় দ্রুত অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভার্চূুয়াল একনেক বৈঠক, ফাইল ছবি 
মূলত ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। ধারণার ওপর প্রকল্পটির ব্যয় আপাতত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে প্রকল্পটির ব্যয় আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। হয়তো প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করা হতে পারে

আবুল কালাম আজাদ, সদস্য, পরিকল্পনা কমিশন

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১০ কোটি ডলারের কো-লেন্ডিং করতে সম্মত হয়েছে। যা প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা জানায়, ভ্যাকসিন কেনা বাবদ ব্যয় কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণে জনস্বাস্থ্য অধিদফতরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোন দেশ থেকে কী উপায়ে কতদিনের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, তা কোন নিয়ম অনুসরণ করে দেওয়া হবে, সেসব বিষয়ে একটি সমন্বিত ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (আরডিপিপি) সংযুক্ত করা জরুরি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে পরিকল্পনা কমিশনকে অবগত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

পরিকল্পনা কমিশন আরও জানায়, ভ্যাকসিন দেওয়ার অনুমোদিত নীতিমালা সর্বসাধারণের বোধগম্যভাবে সারসংক্ষেপ আকারে প্রণয়ন এবং ভ্যাকসিন প্রক্রিয়ার একটি সহজবোধ্য ফ্লো-চার্ট ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে প্রচারের জন্য ব্যানার, মাইকিং ও প্রকাশনা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য একটি করে মোট দু’টি মোবাইল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ভ্যানের সংস্থান রাখতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দ্বৈততা পরিহার করে গঠিত ১০ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এবং ১০টি জেলায় মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকল্পটি মঙ্গলবার একনেকে উপস্থাপনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মূলত ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। ধারণার ওপর প্রকল্পটির ব্যয় আপাতত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে প্রকল্পটির ব্যয় আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। হয়তো প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করা হতে পারে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সোমবার (৪ জানুয়ারি) দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এনিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল সাত হাজার ৬৫০ জনে।

করোনায় বাবাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ছেলে, ছবি- সংগৃহীত    

একই সময়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৯১০ জন। এর মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৯২৯ জনে।

ভ্যাকসিনে রাতারাতি সমাধান নেই

প্রাণঘাতী ও সংক্রামক ব্যাধি থেকে দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের জীবনরক্ষায় টিকা প্রদানে ভূমিকা রেখে আসা আন্তর্জাতিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহ-নেতৃত্বে কোভ্যাক্স ৯টি ফার্মাসিউটিক্যাল ডেভেলপারের কাছ থেকে টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করে রেখেছে। ২০০ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের মধ্যে কোভ্যাক্স ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার সংগ্রহ করতে চায়। কিন্তু কোনো ভ্যাকসিনের যদি একটি ডোজেও কাজ হয় (এখনও অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলোর দুটি ডোজ প্রয়োজন হয়) তবেও ২০০ কোটি ডোজ দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সব মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না।

এসআর/জেডএস/এমএআর