নবীন এক সহকারী পুলিশ সুপারের (৩৭তম বিসিএস কর্মকর্তা) লেখা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর নিজস্ব প্রকাশনা (মাসিক) ডিটেকটিভ-এর বিজয় দিবস সংখ্যা প্রত্যাহার করেছে পুলিশ।

ডিটেকটিভ-এ ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ থাকায় সংখ্যাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্পাদক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) ডিটেকটিভের সম্পাদক ডিআইজি হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিজয় দিবস সংখ্যা বিরতণ না করে ৬৯/১ পলওয়েল ভবন (নিচ তলা) নয়া পল্টন কার্যালয়ে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানান।

বুধবার রাতে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ওই নারী কর্মকর্তা নবীন। তিনি পুলিশে ঢোকার পরপরই লেখাটি দিয়েছিলেন। তার এই লেখা আমাদেরও চোখ এড়িয়ে গেছে। লেখাটি নিয়ে বিতর্ক থাকায় ডিটেকটিভের বিজয় দিবস সংখ্যার যে ১৫ হাজার কপি ছাপানো হয়েছিল, সেগুলোর বিতরণ বন্ধ করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ‘ডিটেকটিভ’ নামে বাংলাদেশ পুলিশের মাসিক ওই ম্যাগাজিনের বিজয় দিবসের সংখ্যার একটি প্রবন্ধকে কেন্দ্র করে পুলিশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ওই প্রবন্ধে পুলিশের ইন্সপেক্টর ও এর নিচের পদের কর্মকর্তাদের ‘ক্ষুধার্ত’ উল্লেখ করা হয়েছে। এসব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ‘ক্ষুধা থেকেই মানুষকে বিশেষভাবে অর্থনৈতিক হয়রানি করে’ বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

‘জনবান্ধব পুলিশ হবে মানুষের প্রথম আশ্রয়স্থল’ শিরোনামে প্রবন্ধটি লিখেছেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-শিক্ষানবিশ) স্বপ্না বেগম।

প্রবন্ধে স্বপ্না বেগম লিখেছেন, ‘অনেকেই আছে বিশেষ করে ইন্সপেক্টর থেকে নিম্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যগণ অতি ক্ষুধার্ত। যার কারণে তারা মানুষকে বিশেষভাবে অর্থনৈতিক হয়রানি করেন। এর কতটুকু দায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বর্তায় আমার জানা নেই।’

ডিটেকটিভের ওই সংখ্যাটি পাওয়ার পরপরই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে পুলিশের ইন্সপেক্টরসহ তাদের অধস্তন কর্মকর্তারা। পুলিশকে ‘নগ্নভাবে’ বিশেষায়িত করা স্বপ্না বেগমের বিষয়ে তদন্ত কমিটির দাবি করেন তারা।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ও ইন্সপেক্টরদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘প্রবন্ধটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’

ইতোমধ্যে চিঠির মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তর ও আইজিপিকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন।

বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী ও মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বৃহৎ একটি অংশকে কটাক্ষ করে এমন নগ্ন ভাষার বিশেষিত করা একজন সহকারী পুলিশ সুপারের (শিক্ষানবিশ) জন্য কতটুকু বাস্তবসম্মত উক্তি তা তদন্তের দাবি রাখে। যেখানে করোনাকালীন পুলিশের ভূমিকা মানুষের মনে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে, যেখানে করোনা মহামারিতে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম শহীদ একজন পুলিশ কনস্টবল, যেখানে করোনা মহামারীতে বাংলাদেশ পুলিশের আক্রান্তদের মধ্যে তিন চতুর্থাংশ সদস্য ইন্সপেক্টর থেকে নিম্ন পদমর্যাদার, সেখানে এমন উক্তি উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রচেষ্টা বলে আমাদের কাছে মনে হয়।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এমন উক্তি শুধুমাত্র ইন্সপেক্টর থেকে নিম্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যগণের প্রতি কোনো অপমানজনক নয়, বরং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্যও অবমাননাকর। এই ধরনের উক্তি পুলিশ বাহিনীতে হতাশার সৃষ্টি করে। উক্ত সহকারী পুলিশ সুপার (শিক্ষানবিশ), প্রবি-৭৫, মিস স্বপ্না বেগম এর উদ্ধৃতির মুদ্রিত অনুলিপি ফেসবুকে প্রকাশের পর থেকে ইন্সপেক্টর থেকে নিম্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যগণের মধ্যে এক ধরনের বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। এই সংক্রান্তে আপনার দৃশ্যমান হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

জেইউ/ওএফ