আধুনিক যন্ত্র সংযোজন করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর দাবি
পাট-সূতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলন
পিপিপি বা লিজ নয়, উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন করে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের পাটকল চালুসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে পাট-সূতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ।
বুধবার (৩০ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান পরিষদের আহ্বায়ক শহিদুল্লাহ চৌধুরি।
বিজ্ঞাপন
পরিষদের অন্য দাবিগুলো হচ্ছে- এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পাটকল আধুনিকায়ন করতে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের প্রস্তাব গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া; অবিলম্বে পাট-সুতা-বস্ত্রকলের শ্রমিকদের সব বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা; ব্যক্তি মালিকানা নির্বিশেষে জুট ও টেক্সটাইল শিল্প সেক্টরের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা বাস্তবায়ন করা; সুনির্দিষ্ট পদে একটানা তিন মাস কর্মরত শ্রমিকদের শ্রম আইনের ধারা ৪ (৮) অনুযায়ী স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে গণ্য করে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা; বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু ও শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধে নির্দেশনা ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া এবং পাট ও পাটশিল্পের সম্ভাবনা নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া, পাট খাত ধ্বংস, দুর্নীতি লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শহিদুল্লাহ চৌধুরি বলেন, গত বছরের ২৮ জুন আকস্মিক এক ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকার অবশিষ্ট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করেছিল। এরপর এক বছর পেরিয়ে গেল। সেদিন সব মিলিয়ে প্রায় ৫১ হাজার পাটকল শ্রমিককে বেকার করে দেওয়া হয়েছিল। করোনা অতিমারির সে দুঃসময়ে পাটকল শ্রমিকরা অথৈ সংকটে পড়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর পাটশিল্পই বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছিল। এ শিল্প শুধু অর্থনীতি নয়; বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। সেই শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বাজারে পাট পণ্যের চাহিদা রয়েছে, দিন দিন তা বাড়ছে। চটের বস্তা ও ব্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে পরিবেশ বিনাশী পলিথিন ব্যবহার কমে গিয়েছিল; এখন পাটের বস্তার অভাবে পুনরায় পলিথিন ফিরে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা পাটকলের আধুনিকায়ন ও উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির সংযোজন করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মিল বন্ধ করার পরিবর্তে সরকারের কাছে মাত্র এক হাজার ২০০ কোটি বরাদ্দ দিয়ে পাটকলের আধুনিকায়ন ও উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপনে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলাম। সরকারি মহল সেসব প্রস্তাব আমলে নেয়নি।
শহিদুল্লাহ চৌধুরি বলেন, সরকার ছয় মাসের মধ্যে পিপিআরের মাধ্যমে পাটকল চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল। পাটকল বন্ধ করার এক বছর পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ নেই। বন্ধকৃত মিলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ৫০ ভাগ নগদ অর্থ এবং বাকি ৫০ ভাগ সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে তিন মাস অন্তর মুনাফা পাওয়ার যে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল; শ্রমিকরা সে অর্থ এখনো পাননি।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে যে শ্রমিকরা অবসরে গিয়েছেন, তারা গ্র্যাচুইটির টাকা এখনও পাননি। আইন অনুযায়ী একমাসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও এক বছরেও তা পরিশোধ করা হয়নি। সরকার যদি নিজেই আইন ভঙ্গ করে, তাহলে জনগণের প্রতিকার পাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না। ইতোমধ্যে তাদের প্রাপ্ত নগদ টাকা সংসারের জন্য খরচের ফলে তা শূন্য হতে চলেছে। অন্যদিকে বদলি শ্রমিকদের কোনো পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। তারা ২০১৫ সালের মঞ্জুরি কমিশন ঘোষিত মজুরির টাকা এখনও পাননি। ফলে তারা মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান, সদস্য কিশোর রায়, শ্রমিক নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
এমএইচএন/আরএইচ