দিনে রেকি, রাতে চোরাই গাড়ি নিয়ে ডাকাতি
রাজধানীর মিরপুরে গাড়ি চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়ার মতো তথ্য পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ঘটনার ছায়া তদন্তে নেমে সংঘবদ্ধ গাড়ি চুরি ও ডাকাত চক্রের সন্ধান পায় ডিবি পুলিশ। চোরাই গাড়ির কারবারের পাশাপাশি দোকানপাট লুট করতেন তারা। চোরাই গাড়ি ব্যবহার করে আধা ঘণ্টার মধ্যে ৫/৭টি দোকান লুট করতেন তারা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার (৯ জানুয়ারি) রাতে অভিযান চালিয়ে প্রাইভেটকার, লাগেজ, বিভিন্ন দোকানের কাটা তালা, সিম, ডেমো মোবাইল ও ডেবিট কার্ড উদ্ধার করে লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগ। এসময় গাড়ি চুরি ও ডাকাতি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গত ৬ জানুয়ারি মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় (মামলা নং-১১) তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় রাজধানীর মিন্টু রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গাড়ি চুরির অভিযোগে মিরপুর মডেল থানার এক মামলার ছায়া তদন্তের নেমে ডিবি লালবাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম এই চক্রটির সন্ধান পায়। অভিযানে গাড়ি চুরির অভিযোগে প্রথমে সিদ্দুকুর রহমান (৪৫), নুরু মিয়া (৩৪), হেমায়েত হোসেন ওরফে হিমু (৩৪) আবুল বাশারকে (২২) গাজীপুর মহানগরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তারা স্বীকার করে, চোরাই গাড়িটি তাদের কাছে আছে ও গাড়িটি তারা দোকান লুট করার কাজে ব্যবহার করে। তাদের দেখানো মতে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানাধীন এলাকা থেকে প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-১২-৭৬৩২) উদ্ধার করা হয়।
ওই গাড়ির পেছনের ডালা খুলে একটি তালা কাটার যন্ত্র ও লাগেজ উদ্বার করা হয়। তাদের থেকে বরিশাল মেট্রো-ল-১১-২৭৩৮ লেখা একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান বলেন, চক্রটি প্রথমে মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিক্সা করে যে জায়গার চুরি করবে সেখানে রেকি করে। চুরির আসা-যাওয়ার পথ নির্ধারণ করে। কোন সময় সিকিউরিটি কম থাকে বা চুরি করার উপযুক্ত সময় তা নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে উপযুক্ত সময়ে প্রাইভেটকার করে চুরির জায়গার গিয়ে কাটার মেশিন দিয়ে তালা কেটে দোকান লুটপাট করে খুব দ্রুত সময় গাড়িতে করে পালিয়ে যায়।
চুরির কাজটি করতো বিশেষত মধ্যরাতে বা ভোর রাতে যখন সিকিউরিটি গার্ডও ঘুমিয়ে যেতো। এ কাজের জন্য তারা সময় নিতো খুবই কম। মাত্র ৩০/৩৫ মিনিটের মধ্যে ৫/৭টি দোকান লুট করে চলে আসতো।
তাদের দেওয়া তথ্য ও জব্দকৃত এনআইডির ঠিকানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, সম্প্রতি অনেকের দোকানের তালা কেটে চুরি হয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলাও হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে জানা যায় যে, চুরির ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানায় ও ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার মামলা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, অপর চক্রের পলাতক সহযোগী কিশোরগঞ্জ জেলার কাশেম (২৮) ও বরগুনা জেলার নাসির (৩১) অত্যন্ত কৌশলে দিনের বেলায় ফেরিওয়ালা সেজে গাড়ির মালিকদের গাড়ি কোথায় রাখে তা দেখে আসতো। দোকান ও বাড়ীতে নিরাপত্তাকর্মী নেই এমন গাড়ি নির্ধারণ করে চুরি শেষে আসা-যাওয়ার পথ রেকি করে। তারপর আলোচনা সাপেক্ষে চক্রটি গভীর রাতে বা সুবিধামতো সময়ে কাটার দিয়ে বাড়ী ও দোকানের তালা-শাটার কেটে টাকা,গাড়ি, মোবাইলসহ মূলমান সামগ্রী লুট করে দ্রুত গাড়িযোগে পালিয়ে যায়।
এছাড়াও সিডিএমএস পর্যালোচনা দেখা যায় যে, গ্রেপ্তার সিদ্দুকুর রহমান নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার ডাকাতি প্রস্তুতি মামলা, ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার চোরাচালান মামলা, ডিএমপি শাহআলী থানার জালনোট মামলা ও সূত্রাপুর থানার মাদক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
গ্রেফতার নুরু মিয়া ডিএমপি দারুসসালাম থানার মাদক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। হেমায়েত হোসেন ধানমন্ডি থানার খুনের মামলা, মিরপুর মডেল থানার মাদক মামলা, শাআলী থানার মাদক মামলা ও পল্টন থানার চুরির মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
ডিবি লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসুদন দাস ঢাকা পোস্টকে জানান, চক্রটি গত ডিসেম্বর জুড়ে অর্ধশতাধিক চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব কাজে তারা আগে চুরি করা গাড়ি ব্যবহার করেছে। এমনও হয়েছে এক রাতে তারা আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ৭/৮টি স্থানে চুরি-ডাকাতি করে পালিয়ে গেছে। চক্রের গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে বিশদ জিজ্ঞাবাদের জন্য মিরপুর থানায় দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। পাঁচ দিনের রিমাণ্ড আবেদন করা হবে।
জেইউ/ওএফ