করোনাযোদ্ধাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আইজিপি

‘করোনা সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসকসহ সকলের প্রচেষ্টা ছিল মহাকাব্যিক। এ মহাকাব্যিক প্রচেষ্টায় যে দুর্দমনীয় সাহস দেখিয়েছেন, ঝুঁকি নিয়েছেন, পেশাগত মমত্ববোধ দেখিয়েছেন তা এক অনন্য ও বিরল নজির সৃষ্টি করেছে। করোনায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পেশাগত দক্ষতার স্বীকৃতি সমগ্র দেশ দিয়েছে, দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।’

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ রোববার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কোভিড-১৯ সম্মুখযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, ‘স‌ারাবি‌শ্বের ম‌তো আমা‌দের জন্যও ক‌রোনা ছিল এক‌টি সম্পূর্ণ নতুন অ‌ভিজ্ঞতা। সঙ্গত কার‌ণেই ক‌রোনার জন্য আমা‌দের কো‌নো পূর্ব প্রস্তু‌তি ছিল না। কিন্তু আমা‌দের বুক ভরা সাহস ছিল, পরাভব না মানার প্রবল প্রত্যয় ছিল। আমরা হতবিহ্বল না হয়ে দুর্দমনীয় প্রত্যয় নিয়ে করোনা মোকাবিলা করেছি। আমরা জানি, বাংলাদেশের মানুষ, বাঙালি জাতি কখনোই পরাজয় মানে না।’

আইজিপি বলেন, ‘শুরু‌তেই করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পুলিশের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ পুলিশের উপযোগী করে করোনা মোকাবিলায় গাইডলাইন তৈরি করেছি। আমা‌দের এসও‌পি বা গাইডলাইন‌টি বাংলা‌দেশ পু‌লি‌শের ও‌য়েবসাই‌টে আপ‌লোড করা হ‌য়ে‌ছিল যা‌তে ক‌রে অন্যান্য দেশ আমা‌দের অ‌ভিজ্ঞতা ও আ‌য়োজন‌ থেকেও উপকৃত হ‌তে পা‌রে।’

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে ৫০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। মাত্র তিন সপ্তাহে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এ হাসপাতালে প্লাজমা ব্যাংক স্থাপন ও প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ঔদার্যে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, তাদের মধ্যে কনফিডেন্স তৈরি করা‌। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কোনো সুরক্ষা সামগ্রীও ছিল না। তবুও সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য অ‌পেক্ষা না ক‌রে, নি‌শ্চিত মৃত্যুর ঝুঁঁ‌কি কাঁধে নি‌য়ে জনগ‌ণের সুরক্ষায় মা‌ঠে থে‌কে‌ছে পু‌লি‌শের প্রত্যক সদস্য। দায়িত্ব পালনকালে অনেক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। পরবর্তী‌তে বাংলাদেশ পু‌লি‌শের প্র‌ত্যেক সদস্য‌কে পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিই সরবরাহ করা হ‌য়ে‌ছে।’

আইজিপি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে শুধু পুলিশ সদস্যই নয়, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকেও চিকিৎসা দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।’

পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আমরা অনেক দূর এসেছি, যেতে হবে আ‌রও বহুদূর। আমরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে বিশ্বমানের বিশেষায়িত হাসপাতালে রূপান্তর করতে চাই। ভবিষ্যতে এ হাসপাতালে ক্যাথল্যাব স্থাপন এবং ক্যান্সার চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হবে।’

বেনজীর বলেন, ‘ঢাকায় একটি বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। বিভাগীয় ও জেলা শহরে স্থাপিত পুলিশ হাসপাতালগুলো আধুনিকায়ন করা হবে।’

চিকিৎসকদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, ‘আপনারা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। আগামীতে আরও বেশি ভালো করতে হবে। আমরা আকাশ ছুঁতে চাই। আমরা সকলে মিলে হাতে হাত ধরে একযোগে দেশের জন্য, জনগণের জন্য কাজ করব।’

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আজকের এ পুরস্কার সরকার, পুলিশ এবং দেশের মানুষের পক্ষ থেকে আপনাদের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি আপনাদেরকে আরও বেশি ভালো কাজে উজ্জীবিত করবে, উদ্দীপ্ত করবে, অনুপ্রাণিত করবে।’ 

এ সময় আইজিপি করোনাযোদ্ধাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

পু‌লিশ সদর দফতরের এআই‌জি (মি‌ডিয়া অ্যান্ড পাব‌লিক রি‌লেশন্স) মো. সো‌হেল রানা জানান, অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজি (এএন্ডও) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ‎র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, নৌ পুলিশের ডিআইজি মো. আতিকুল ইসলাম চিকিৎসাকালীন তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হাসপাতালের পরিচালক ড. হাসান-উল-হায়দার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মনোয়ার হোসেন খান।
 
অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং হাসপাতালের সকল পর্যায়ের করোনাযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। 

জেইউ/এইচকে