পি কে হালদারকে ধরতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল

রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতায় পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১০ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পৃথক নোটিশে তাদেরকে ১৪ জানুয়ারি দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান স্বাক্ষরিত পৃথক নোটিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পরে দুদকের জনসংযোগ দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

তলবের নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সিইও ও এমডি সামী হুদা, অ্যাক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী আহমেদ জামাল, সিএফও মানিক লাল সম্মাদার এবং হেড অব ক্রেডিট মো: মাহমুদা কায়সার।

‍দুদক সূত্র জানায়, পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকার সময় তার আত্মীয়-স্বজনকে আরও কয়েকটি লিজিং কোম্পানির ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক বানান। তিনি একক কর্তৃত্বে পিপলস লিজিংসহ বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির টাকা বিভিন্ন কৌশলে বের করে নেন। পিপলস লিজিংয়ে আমানতকারীদের তিন হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করে কোম্পানিটিকে পথে বসান। এছাড়া জামানত না নিয়েই শিপিং লিমিটেডকে ৩০ কোটি টাকা এবং এমটিবি মেরিন লিমিটেডকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগে তাদেরকে তলব করেছে দুদক।

এর আগে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ও সাবেক পরিচালক আরেফিন সামসুল আলামিনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাত জনকে তলব করে চিঠি দেয় দুদক। ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি তাদের দুদকে হাজির হওয়ার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।  

অভিযোগ রয়েছে, পি কে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানসহ পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে এরই মধ‌্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ মামলা করে দুদক। তবে মামলার হওয়ার আগেই লাপাত্তা পি কে হালদার।

মামলার এজাহারে প্রশান্ত কুমার হালদার ও তার স্বার্থ–সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক ১ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার লেনদেনের বিষয়ে তথ্য ছিল। দুদক বলছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার।

ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম উঠে আসে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর হাজির হতে নোটিশ দিয়েছিল সংস্থাটি। তার আগে ৩ অক্টোবর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ঠিকই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে দেশে ফেরার কথা বলেও আর আসেননি। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল।

গত ৫ জানুয়ারি পি কে হালদারের প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের বিষয়ে একটি সূত্র থেকে জানা যায়, পি কে হালদার ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, পি কে হালদারের হিসাবে ২৪০ কোটি টাকা এবং তার মা লীলাবতী হালদারের হিসাবে জমা হয় ১৬০ কোটি টাকা। তবে এসব হিসাবে এখন জমা আছে মাত্র ১০ কোটি টাকার কম। অন্যদিকে পি কে হালদার এক ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বের করে নিয়েছেন। এসব টাকা দিয়েই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা কেনা হয়। তবে ঋণ নেওয়া পুরো টাকার হদিস মিলছে না।

আরএম/এসআরএস