নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম

আগামী ১৭ জানুয়ারি ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) । খসড়ার ওপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২ মার্চ। ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতি বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হয়। তবে ২০২০ সালে করোনার কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ইসি সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এবারের ভোটার তালিকা তিন বছর আগের ডাটা অনুযায়ী করা হবে। কারণ, ২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা তথ্য নিতে পারিনি। কোভিডের কারণে এ বছরও পারবো কিনা বলতে পারছি। তবে আমরা একটি নির্ভুল ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করতে চাই।

মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ না করে কীভাবে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রকাশ সম্ভব এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছরই বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করি। যারা তিন বছর পরে ভোটার হওয়ার যোগ্য তিন বছর আগে তাদের তথ্য নিয়ে রেখেছি। ওই তথ্যগুলো আমাদের কাছে আছে। এখন যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে সেখান থেকে তাদের নাম খসড়া তালিকায় যুক্ত হবে। কারণ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক ব্যয়বহুল। তাই আমরা একসাথে দুই-তিন বছরের তথ্য নিয়ে রাখি।

মৃত্যু আর স্থান পরিবর্তন হলে কীভাবে নির্ণয় করা হবে বা খসড়ায় সেগুলো কীভাবে উপস্থাপন করা হবে এমন প্রশ্নে ইসি রফিকুল বলেন, যেহেতু করোনায় পূর্বের পরিকল্পনা নতুনভাবে করতে হয়েছে, তাই মৃত ভোটারদের ক্ষেত্রেও নতুন পরিকল্পনা নিতে হয়েছে। আমাদের প্রত্যেক থানা ও জেলা নির্বাচন অফিস মৃত ভোটারদের তথ্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিয়ে সার্ভারে পাঠিয়েছে। সেগুলো সার্ভার থেকে বাদ দিয়ে খসড়ার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

অন্যদিকে যেসব ভোটাররা স্থান পরিবর্তন করেছে তাদের জন্য আমাদের কিছু করতে হবে না। যখন কেউ স্থান পরিবর্তন করে ফেলে তবে সে তথ্য ইসির সার্ভারে অটোমেটিক যুক্ত হয়ে যায়।

প্রবাসীদের ক্ষেত্রে সারাবছরই ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান ইসি রফিকুল। তিনি বলেন, যারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়ে প্রবাসে চলে গেছেন, তারা দেশে এলেই থানা নির্বাচন অফিস অথবা হেড অফিসে এসে ছবি তুলে বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে যেতে পারবেন।

তিনি বলেন, ইসির পক্ষ থেকে সবসময়ই নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা থাকে। তারপরও গত বছর যেহেতু বাড়ি বাড়ি যাওয়া হয়নি সেক্ষেত্রে কিছু লোক বাদ পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।

ইসি সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ না করায় নতুন ভোটারদের একটি বড় অংশ বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে অনেক মৃত ভোটারকে বাদ দেওয়া সম্ভবও হবে না। এর আগে, ২০১৯ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৩ লাখ ৯২ হাজার ২৩৬ জন মৃত নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০২০ সালে প্রকাশিত ভোটার তালিকা থেকে এসব নাগরিকের নাম বাদ দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেসময় ১৬ বছর বয়সীদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রায় ৯৬ লাখ নাগরিকের তথ্য পেয়েছিল ইসি। এরমধ্যে ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪১ জনকে ভোটার তালিকাভুক্ত করে ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। বাকি প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ নাগরিকের তথ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে জমা রয়েছে। চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, এমন নাগরিকদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইসি।

এ তালিকা আগামী ১৭ জানুয়ারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রকাশ করা হবে। খসড়া তালিকার ওপর কারও আপত্তি বা সংশোধনী থাকলে, তা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জানানো যাবে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওইসব দাবি ও আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। ২ মার্চ ভোটার দিবসে চূড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

এসআর/এসআরএস