যেভাবে চেয়েছি সেভাবে মামলা নেয়নি পুলিশ
আমার মেয়েকে অপহরণ করে দিহান ও তার সঙ্গীরা তার বাসায় নিয়ে যায়, অভিযোগ করেন আনুশকার মা
রাজধানীর কলাবাগানে ও–লেবেল পড়ুয়া ছাত্রী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়েছেন তার মা শাহনূরী আমিন। একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তার মেয়ের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তারা যেভাবে মামলা করতে চেয়েছিলেন পুলিশ সেভাবে মামলাটি নেয়নি।
সরকারের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবিও তুলে ধরেন তিনি। দাবিগুলো হচ্ছে— ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচার করা, মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে করা, দিহান ও তার সঙ্গীদের বিচারের আওতায় আনা, ডিএনএ পরীক্ষা করা এবং আমার পরিবার যেন কোনো অসুবিধার শিকার না হয় তার ব্যবস্থা করা। আজ (বুধবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব দাবি জানান।
বিজ্ঞাপন
সেদিনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৭ তারিখে আমার মেয়েকে অপহরণ করে দিহান ও তার সঙ্গীরা তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার মেয়েকে অমানবিক নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যা করে আমাকে ফোন করা হয়। দিহান আমাকে ফোন করে জানায়, সে (আনুশকা) সেন্সলেস হয়ে গেছে। আমি হসপিটালে এসে দেখি দিহানসহ তার তিন সঙ্গী বসে আছে। তারা আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে আন্টি আমাকে বাঁচান। যখন আমার মেয়েকে দেখতে চাই, তখন আমাকে দেখতে যেতে দেওয়া হয়নি। কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে জানায় আনুশকা মারা গেছে। পরে দিহানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি আমার মেয়েকে তোমরা কোথায় পেলে, কেন মারা গেল?
তিনি আরও বলেন, তখন সে আমাকে বলে আমরা চারজন ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাই এবং সেখানে সে সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন আবার জিজ্ঞেস করি, বাসায় আর কোন মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল না বা তোমার বাবা-মা ছিল না? তখন বলে, না আমরা চারজনই তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর আমার বুঝতে বাকি থাকে না সেখানে কী হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, আমরা যেভাবে মামলাটি করতে চেয়েছে পুলিশ সেভাবে মামলাটি নেয়নি। একটি মহল দিহান ও তার সঙ্গীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে এবং আমার মেয়ের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে, আমার মেয়ের সাথে দিহানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটি একদমই ঠিক না। কিছু কিছু কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি প্রচার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আনুশকার বাবা আলআমিন আহমেদ রব বলেন, আমার মেয়েকে প্রতিটা মুহূর্তে আমি আমার মায়ের মতো করে রেখেছি। আমার পারমিশন ছাড়া অথবা আমার সাথে কথা না বলে সে কোথাও কিছু করতো না। ওইদিনও যখন সে বিপদে পড়েছে বা কোনো ডিসিশন নিতে হবে ভেবেছেম, তখন আমাকে জানাতে ফোন করেছে। আমার কষ্টের বিষয় ওই মুহূর্তে আমি কলটা ধরতে পারিনি। যদি সে সময় কলটি ধরতে পারতাম তাহলে হয়তো এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। আমার একটাই চাওয়া, আমি যেটা হারিয়েছি এটা যেন আর কোনো বাবা-মা কখনও না হারায়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, দিহানের এই পথে যাওয়ার পেছনে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের দাবি মেনে নিতে হবে। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেল গঠন করতে শিক্ষামন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। চিকিৎসক বলেছে ময়নাতদন্তে আনুশকাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু আনুশকার মায়ের দেখানো একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে পিঠে কালশিটে দাগ রয়েছে। যা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৩ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে— যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে সাইবারের মাধ্যমে ব্যবহৃত ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র শিশু-কিশোর ও তরুণদের মানসিক বিকাশ উপযোগী সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং ধর্ষণ, যৌন অপরাধের ঘটনা প্রতিরোধে পাঠ্যসূচিতে যৌন ও প্রজনন শিক্ষার বিষয়ে অন্তর্ভুক্তকরণসহ এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শিমা মুসলেম, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহাতাব নেছা, ঢাকা মহানগরের মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস প্রমুখ উপস্থিতি ছিলেন। এছাড়া আনুশকার চার সহপাঠীও উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচএন/এনএফ