পৌষ সংক্রান্তি: রঙিন ঘুড়িতে ছেয়ে যাবে ঢাকার আকাশ
প্রথমবারের মতো সাকরাইন উৎসব করছে ডিএসসিসি
আজ বৃহস্পতিবার। ১৪২৭ বঙ্গাব্দের ৩০ পৌষ। বাংলা বছরের পৌষ মাসের শেষ দিন। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে পৌষ মাসের শেষ দিনটি কোনও কোনও স্থানে মকর সংক্রান্তি হিসেবেও পালন করা হয়। গ্রাম বাংলায় এই উৎসবে বাড়িতে বাড়িতে পিঠার আয়োজন করা হয় আগে থেকেই। আয়োজন করা হয় ঘুড়ি উৎসবেরও। কোথাও কোথায় এই সংক্রান্তিতে মেলাও হয়।
পৌষ বিদায় নিচ্ছে। আর আজ বৃহস্পতিবার এই পৌষের সমাপনী দিনে উদ্যাপিত হচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী উৎসব পৌষ সংক্রান্তি। একই দিনে পুরান ঢাকা মাতবে সাকরাইন উৎসবে। অনেক আগে থেকেই পুরান ঢাকায় সাড়ম্বরে পালিত হয় দিনটি। উৎসবে অংশ নেন সব সবাই। পুরান ঢাকা এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে বাড়বে ঘুড়ির সংখ্যা, বাড়বে উৎসবের রঙ। সব মিলিয়ে রঙিন ঘুড়িতে ছেয়ে যাবে ঢাকার আকাশ।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আকাশ রাঙাতে প্রথমবারের মতো সাকরাইন তথা ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। করপোরেশনের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে এই উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে।
‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’ স্লোগানে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই উৎসব একযোগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে আয়োজন করা হয়েছে। দুপুর দুইটা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে রাত আটটা পর্যন্ত।
বিজ্ঞাপন
আয়োজন সফল করতে ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আয়োজনের অংশ হিসেবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের ৭৫ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের ২৫ জন মহিলা কাউন্সিলরকে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির পক্ষ হতে ১০০ করে ঘুড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। কাউন্সিলরগণ সেসব ঘুড়ি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জনসাধারণের মাঝে বিলি করবেন, যারা কমিটি নির্ধারিত মাঠ কিংবা বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়ে শুন্যে ঘুড়ি ওড়াবেন।
উৎসব আয়োজন প্রসঙ্গে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ বলেন, সাকরাইন উৎসব পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। কালের পরিক্রমায় এই ঐতিহ্য পুরান ঢাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু যান্ত্রিক জীবনের বাস্তবতায় আমরা অনেকেই ভুলতে বসেছি, সাকরাইন উৎসব আমাদের ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই ঢাকার ঐতিহ্য লালন, সংরক্ষণ এবং প্রসারে ডিএসসিসির মেয়র যে রূপরেখা ঘোষণা করেছেন সে ধারাবাহিকতায় আমরা প্রথমবারের মতো এই ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেছি।
তিনি আরও বলেন, যদিও উৎসবে আমরা কাউন্সিলরদের কাছে ১০০ করে মোট ১০ হাজার ঘুড়ি সরবরাহ করেছি এবং সেসব ঘুড়ি আগ্রহী লোকজনের মাঝে বিতরণ করা হবে, তারপরও কেউ বাদ পড়লে সংশ্লিষ্ট আগ্রহী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ নিজ বাড়ির ছাদ থেকে নিজের ঘুড়ি নিয়ে এই উৎসবে অংশ নিতে পারবেন। এই উৎসব সকলের জন্য উন্মুক্ত, সার্বজনীন।
সাকরাইন উৎসব-১৪২৭ আয়োজন প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ঐতিহ্যের সুন্দর, সচল, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার যে রূপরেখা মেয়র ঘোষণা করেছেন, তারই আলোকে এবার পৌষ সংক্রান্তিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রথমবারের মতো ৭৫টি ওয়ার্ডে সমন্বিতভাবে পৌষ সাকরাইন তথা ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করেছে। এ কার্যক্রমে আমাদের কাউন্সিলরবৃন্দ সম্পৃক্ত থেকে একটি সফল আয়োজনের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই আয়োজন পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ফিরিয়ে আনতে একটি মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নগর ভবনে সাকরাইন (ঘুড়ি উৎসব-১৪২৭) উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আপনারা সকলেই জানেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহার আমি উল্লেখ করেছিলাম- ঐতিহ্যের ঢাকাকে আমরা গড়ে তুলব। আমাদের ঐতিহ্যের ঢাকার মূল উপাদানের হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি এবং উৎসবগুলো আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ও সমাদৃত। আর সাকরাইন, ঘুড়ি উৎসব আমাদের সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। সে প্রেক্ষিতেই আমরা ৩০ পৌষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডেই প্রথমবারের মত একযোগে সাকরাইন উৎসবের আয়োজন করেছি। আমরা সাকরাইন, ঘুড়ি উৎসবকে শুধু ঢাকা শহরেই নয়, সারা বিশ্বে পৌঁছে দিতে চাই। ঐতিহ্য লালনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
এএসএস/এইচকে