জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে কাজ করছে সরকার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল - ছবি: শাকিল আহমেদ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা শুধু জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমন করছি তাই নয়, পাশাপাশি ভুলপথ থেকে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন তাদের ট্রাক্টর, কৃষি উপকরণ, নগদ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) র্যাব সদর দফতরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান ‘নব দিগন্তের পথে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ফুল দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ৯ জন জঙ্গি সদস্য। তারা এ সময় সন্ত্রাসের জীবন পরিত্যাগ করে সমাজের মূলধারায় ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
বিজ্ঞাপন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনও জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন জিরো টলারেন্সের কথা। এটা আমরা কখনও বলি না যে, জঙ্গিবাদকে মূলোৎপাটন করেছি। বলেছি, জঙ্গিবাদকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।
মন্ত্রী বলেন, আমি অনেক দেশেই গিয়েছি। অনেকে প্রশ্ন করে যে, তোমরা কীভাবে জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করছ? বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ কখনও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না বলেই আমরা জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, একের পর এক যখন জঙ্গিরা উত্থাপন ঘটাচ্ছিল তখন আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী দলমত, ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ডাক দিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়াতে। সবাই সোচ্চার হয়েছে, মানববন্ধন হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। স্কুলের ছাত্রটিও বলেছিল জঙ্গিবাদকে সমর্থন করি না।
মন্ত্রী বলেন, সেই থেকে জনগণ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফরিদ উদ্দিন মাসুদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন, যা দেশে-বিদেশে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। সব ধর্মের গুরুদের নিয়ে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, পঞ্চগড়ে হিন্দু ইস্কন মন্দিরে পুরোহিতকে হত্যা, বৌদ্ধ পুরোহিতকে হত্যা, শিয়া মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ইমামকে গুলির দৃশ্য দেখেছিলাম। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে র্যাব এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আজ তারই প্রতিফলন এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান।
মন্ত্রী বলেন, যারা বিভ্রান্ত হয়েছিল, পথ হারিয়েছিল, যারা ভুল পথে ভুল আদর্শ বুকে নিয়েছিল, তারা আজ বাবা-মার কাছে ফিরেছেন, বাবা-মার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, যা অনেক দিন পর দেখছি। ক্যামেরাবন্দী এ দৃশ্য দেখবে দেশের মানুষ। এজন্য র্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, উন্নয়নের রোল মডেলের সাথে সাথে জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ হচ্ছে রোল মডেল। জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দিক নির্দেশনা হচ্ছে- সমাজে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। যারাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেয়েছে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি। সেটার বাস্তবায়নই আজকের এই অনুষ্ঠান।
র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জঙ্গি আত্মসমর্পণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসার ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের শেখ ফজলে রহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রধান খন্দকার ফারজানা রহমান, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক আবুল খায়ের।
জেইউ/এইচকে