আত্মসমর্পণকারী নারী জঙ্গি আবিদা জান্নাত আসমা

জঙ্গিবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পণ করা নারী জঙ্গি আবিদা জান্নাত আসমা বলেছেন, জঙ্গিবাদ ভুল পথ। সবাই নিজেকে জানুন। নিজের মতকে প্রাধান্য দিন। যাতে করে আমাদের কাউকে যেন জঙ্গিবাদের ফাঁদে পড়তে না হয়। অন্যদের কথা যেন আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস না করি।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে র‍্যাব সদর দপ্তরে জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান ‘নব দিগন্তের পথে’ নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার সময় আবিদা এসব কথা বলেন।

আবিদা জঙ্গিবাদে কিভাবে জড়িয়েছেন তা উল্লেখ করে বলেন, ২০১৯ সালে আমি এসএসসি পাস করি। তার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবারকে না জানিয়ে তার সঙ্গে অনেক জায়গায় দেখা করতাম। ২০১৮ সালে পরিবারকে না জানিয়ে তাকে বিয়ে করি। এসএসসি পাশের পর পরিবারের কাউকে না জানিয়ে পড়াশুনার জন্য বিদেশে যাই। সেও আমার সঙ্গে যায়। যদিও এটা তার (স্বামী) পরিকল্পনা ছিল। যেটা আমি বা পরিবার কেউ জানতো না।

আবিদা জান্নাত আসমা বলেন, ছয়মাস পর আবার দেশে ফিরে আসি। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থাকি। মূলত তখন জানতে পারি, আমার স্বামী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সেও আমাকে তার কাজে সহযোগীতা করতে বলে। আমিও তার মাধ্যমে প্রভাবিত হই। আমিও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাই। কিন্তু আমি যে ভুল পথে পা বাড়িয়েছি, তা ধীরে ধীরে বুঝতে পারি।

আবিদা বলেন, একটি স্বাভাবিক জীবনের বাবা-মায়ের আদর স্নেহ ভালোবাসা সবকিছু ছেড়ে বস্তি ও বন্দীর জীবন যাপন করতে হয়। যে মানুষটি ভালোবেসে স্বপ্ন দেখিয়ে আমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়, সেও কষ্টের জীবন যাপন করছিল। সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কষ্টের জীবন বেছে নিতে হয়।

তিনি বলেন, এ থেকে পরিত্রাণ পেতে আমি র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেই। একপর্যায়ে আমি পালিয়ে এসে একাই র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করি।

মেয়েকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন আবিদার মা

র‍্যাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবিদা বলেন, জঙ্গিবাদ ভুল পথ। এই পথ ছেড়ে আমার স্বামীকেও আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান করছি।

সবশেষে জান্নাত বলেন, আমাদের কাউকে যেন এ ফাঁদে পড়তে না হয়। নিজের যেন একটা জাজমেন্ট থাকে। আমরা নিজেরা যেন নিজেদের জাজ করতে পারি। অন্যদের কথা যেন আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস না করি।

মেয়েকে ফিরে পেয়ে আবিদার মা শাহিদা সুলতানা বলেন, আজকে আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমরা আসমাকে ছোটবেলা থেকেই অনেক ভালোবাসতাম। কিছুদিন আগে শুনতে পারি, আসমা যাকে বিয়ে করেছে সে একজন জঙ্গি। সে তাকেও জঙ্গি বানিয়েছে। একজন জঙ্গির মা হওয়া অনেক কষ্টের। আমি সকল মা-বাবাকে অনুরোধ করবো, আপনারা আপনাদের সন্তানদের খেয়াল রাখুন, সময় দিন।

এর আগে, জঙ্গি দমনে সবচেয়ে সফল পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাবের সহযোগীতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ফুল দিয়ে আজ আত্মসমর্পণ করে নয় জঙ্গি সদস্য। 

আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের ‘ডি-রেডিক্যালাইজেশন’ অ্যান্ড ‘রিহ্যাবিলিটেশন’ এর মাধ্যমে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার জীবন পরিত্যাগ করে শান্তি ও আলোর পথে তথা সমাজের মূলধারায় নিজেদের সমর্পণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) র‍্যাব সদর দফতরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে ‘নব দিগন্তের’ পথে শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

র‍্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসার ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের শেখ ফজলে রহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রধান খন্দকার ফারজানা রহমান, ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সিটি এডিটর আবুল খায়ের।

জেইউ/এমএইচএস