শোক দিবসে কোয়ান্টামের ‘দাফন করসেবা’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে হাজারো স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে ‘দাফন করসেবা’র আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।
রোববার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইলের ওয়াইএমসিএ ভবনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এ কার্যক্রমে অংশ নেন।
বিজ্ঞাপন
কাকরাইলে কোয়ান্টামের দাফন ক্যাম্প কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মরদেহের জন্য কেউ কাফনের কাপড় কাটছেন, কেউ আতর-সুরমা প্যাকেট করছেন। কেউ বডিব্যাগ প্রস্তুত করছেন, কেউ আবার পিপিই গোছাচ্ছেন। এভাবেই কর্পূর, তুলা, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লভস প্যাকেটে ভরে প্রস্তুত হচ্ছে একেকটি প্যাকেট। হাত ঘুরে সেগুলো চলে যাচ্ছে গোসলখানা বা হাম্মামখানার স্টোরে। দাফনকর্মীরা সেখান থেকে একেকটি প্যাকেট ব্যবহার করবেন একেকটি মরদেহের জন্য। এভাবেই সহজে সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করতে মরদেহ ও দাফনকর্মীদের পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ করসেবার আয়োজন। পাশাপাশি কাপড় কাটাসহ বডিব্যাগ প্রস্তুতির প্রশিক্ষণেও অংশ নেন তারা।
জানা যায়, ২০২০ সালে করোনার শুরু থেকে গত শনিবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত ৫ হাজার ৭২০টিরও বেশি মরদেহের শেষযাত্রায় সঙ্গী হয়েছেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। এর মধ্যে রয়েছেন মুসলিম ৫ হাজার ৪০ জন, সনাতন ধর্মের ৬০৮, বৌদ্ধ ধর্মের ৩১ এবং খ্রিষ্টান ধর্মের ৪১ জন।
বিজ্ঞাপন
২০২১ সালের শুরু থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতে এ সংখ্যা ২৭৫০ জন। এর মধ্যে মুসলিম ২৫৮২, সনাতন ১৪৭, বৌদ্ধ ৩ জন এবং খ্রিষ্টান ধর্মের রয়েছে ১৮ জন।
রাজধানীর কাকরাইলে কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের ইনচার্জ খন্দকার সজিবুল ইসলাম জানান, জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমরা গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানাই। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে বাঙালি হিসেবে জাতির যেকোনো দুর্যোগে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাকর্মীরা প্রস্তুত। শোক দিবস উপলক্ষে আজ এক হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাকর্মী এসেছেন। কোয়ান্টাম পরিবারের বিভিন্ন পেশার সদস্যরা সফল করবেন সারাদিনের এ করসেবা।
সজিবুল ইসলাম আরও জানান, করোনার শুরু থেকেই করোনা বা করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তিদের শেষকৃত্যে অংশ নিচ্ছে কোয়ান্টাম। স্বপরিকল্পনা, স্বঅর্থায়ন আর স্বেচ্ছাসেবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে এ দাফন সেবা। সব মিলিয়ে শুধু রাজধানীতে দাফন সেবায় সরাসরি জড়িত রয়েছেন দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। সারা দেশে এ সংখ্যা প্রায় ১৫শরও বেশি।
যথাযথ ধর্মীয় রীতি মেনে চলছে কোয়ান্টামের দাফনসেবা। হাসপাতাল ছাড়াও কাকরাইলে নিজস্ব গোসলখানায় ভাইরাসমুক্ত করে যথাযথভাবে সাজিয়ে প্রয়োজনে কবরস্থান বা সমাধি পর্যন্ত ছুটে চলেছেন তারা। রক্তদানসহ কোয়ান্টামের বহুমুখী সেবার মধ্যে ২০০৪ সালে রাজশাহীতে বেওয়ারিশ লাশ দাফনের মধ্য দিয়ে চালু হয় দাফন কার্যক্রম। করোনায় মৃতের দাফনে সুরক্ষার জন্যে ব্যবহৃত হয় কয়েক ধরনের জীবাণুনাশক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী চলছে করোনাকালীন দাফন কার্যক্রম। পাশাপাশি সাধারণ মরদেহ গোসলেরও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। দিনে বা রাতে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত কর্মীরা। মানবিক মূল্যবোধ থেকেই দেশের যেকোনো দুর্যোগে সাধ্যমতো সেবা দিতে প্রস্তুত কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাকর্মীরা।
এসআই/এমএইচএস