জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে উত্তরণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি ‘ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

রোববার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার উত্তর খড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১০টায় আয়োজিত এ মেডিকেল ক্যাম্পে কুমারভোগ, কনকসার ও গোয়ালিমান্দ্রা ইউনিয়ন থেকে আসা প্রায় পাঁচ শতাধিক বেদে সদস্য ঢাকার অভিজ্ঞ ডাক্তারদের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ পেয়েছেন। উপস্থিত সবার মাঝে একটি করে গামছা, মাস্ক ও সাবান বিতরণ করা হয়েছে। 

উপস্থিত রোগীদের সুবিধার্থে মেডিকেল ক্যাম্পটিতে যথাক্রমে মেডিসিন, গাইনি, অর্থোপেডিকস ও সার্জারি এই চারটি বুথ স্থাপন করা হয়। প্রতিটি বুথে দুজন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীদের সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দেন। যে চিকিৎসকরা সেবা দেন তারা হলেন, ডা. মো. আনহারুর রহমান, ডা. এটিএম বাহার উদ্দীন, ডা. সুরাইয়া খানম, ডা. রোহান আহমেদ, ডা. শারমিন আহমেদ, ডা. সিহান মাহমুদ রেদোয়ানুল হক, ডা. নাজিয়া সুলতানা, ডা. ওয়াসিফুল শিমুল ও ডা. রুমি মুবিন।

চিকিৎসা কার্যক্রমের শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পরিচালক এম এম মাহবুব হাসান। তিনি উপস্থিত অতিথি ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, জাতীয় শোক দিবস ও বেদনার্ত একটি দিনে এমন মহত কাজের অংশীদার হতে পেরে গর্ব বোধ করছি। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হতো না, তাই আসুন সবাই মিলে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে নিজেদের কলঙ্ক মোচনের লড়াইয়ে শামিল রাখি। 

পিছিয়ে পড়া বেদে জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ২০০৯ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়াসহ তাদের কল্যাণে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এম এম মাহবুব হাসান। 

তিনি আরও বলেন, উত্তরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তথা ডিআইজি হাবিবুর রহমান। তিনি নিজের মৌলিক পুলিশিং পেশার পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়নের জন্য সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন। সবার দোয়া ও ভালোবাসা থাকলে ডিআইজি হাবিবুর রহমান দেশের জন্য আরও অনেক কিছু করতে পারবেন।

তিনি বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সব শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে উপস্থিত সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। শেষে উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশসহ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও তানিয়া হক শোভা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে উত্তরণ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এমন একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি গর্বিত ও আপ্লুত। গোপালগঞ্জের কৃতিসন্তান ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সব মানবিক কার্যক্রমে আমি আপনাদের পাশে থাকব। 

উত্তরণ ফাউন্ডেশন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের সমন্বয়কারী ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর (সার্জারি) ডা. মো. আনহারুর রহমান বলেন, আমি এর আগেও উত্তরণ ফাউন্ডেশনের দুটি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজনে সহযোগিতা করেছি। মানবতার ফেরিওয়ালা ডিআইজি হাবিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গা থেকে আমি উত্তরণ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে আপনাদের পাশে থাকতে চাই। 

মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষে লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ডিআইজি হাবিবুর রহমান আমাদের পুলিশ বিভাগের গর্ব। তিনি নিজের এতো বড় দায়িত্বের বাইরেও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। সবার দোয়া ও সমর্থন থাকলে তিনি আরও এগিয়ে যাবেন। 

ঢাকা রেঞ্জের বর্তমান উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান মেডিকেল ক্যাম্পটির আয়োজক সংস্থা ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৪ সাল থেকে সংস্থাটির ব্যানারে পিছিয়ে পড়া বেদে ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে আসছেন।

গত কয়েক বছর ধরে তিনি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর বাসিন্দাদের জন্য নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। সমাজের অস্পৃশ্য ও পিছিয়ে পড়াদের দিন বদলের কারিগর ও নিবেদিত প্রাণ হিসেবে ডিআইজি হাবিবুর রহমানের অনেক প্রশংসা পেয়েছে।