করোনা বুলেটিনের আদলে ‘ভ্যাকসিন বুলেটিন’
করোনার সর্বশেষ তথ্য দিতে হাজির হতো স্বাস্থ্য বুলেটিন
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই জাতীয়ভাবে শুরু হচ্ছে প্রথম ধাপের টিকাদান কর্মসূচি। এ লক্ষ্যে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশবাসীকে টিকাদানের সর্বশেষ তথ্য জানাতে করোনা বুলেটিনের মতো নিয়মিত ‘ভ্যাকসিন বুলেটিন’ প্রচারের পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তথ্য প্রবাহের এই সার্বিক বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) নতুন পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, করোনা বুলেটিনের মতো একটা ভ্যাকসিন বুলেটিন হবে, এটা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের ইচ্ছা। এ ধরনের বুলেটিন নিয়মিত প্রচার হলে সবাই তথ্যটা যথাযথভাবে পাবে। কারণ, এতো বড় একটা কাজের প্রচারও একটা বড় বিষয়। নয়তো একেক মিডিয়ায় একেক তথ্য আসবে। একজন মানুষ কোথায় গিয়ে টিকা নেবে, কোথায় গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবে, এসব নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।
সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের টিকা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যেই আমরা টিকা পেয়ে যাব।
অধ্যাপক ডা. মো. খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
বিজ্ঞাপন
কবে থেকে এই বুলেটিন প্রচার হবে এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাদেরকে নিশ্চয়ই একটা নির্দেশনা পাঠাবেন। সেখানে উল্লেখ থাকবে, আমরা কখন, কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন বুলেটিন পাঠাবো। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, অফিসিয়ালি আমরা এখনো তথ্য পাইনি। তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা গণমাধ্যমকে জানাবো।
এ প্রসঙ্গে ‘জাতীয় করোনা ভ্যাকসিন বিতরণ কমিটি’র প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভ্যাকসিন বুলেটিন প্রচারের বিষয়ে আমাদেরকে জানিয়েছেন। দেশব্যাপী করোনা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হলে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত ভ্যাকসিন বুলেটিন প্রচারের পদক্ষেপ নেব। তবে এই বুলেটিনে কোন কোন তথ্য প্রচার হবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
টিকা পেতে রেজিস্ট্রেশন শুরু ২৬ জানুয়ারি
করোনাভাইরাসের টিকা পেতে সবাইকে অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি। সেখান থেকে সরকার টিকা গ্রহীতার সম্পর্কে যেমন সব তথ্য পাবে, তেমনি যারা টিকা নেবেন তারাও পরবর্তী আপডেট সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেন, আইসিটি ডিভিশন অ্যাপ তৈরির কাজ করছে। অ্যাপ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে প্রত্যেককেই ভ্যাকসিন গ্রহণের সময় জানিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি জানান, রেজিস্ট্রেশন করতে সর্বোচ্চ ৪-৫ মিনিট সময় লাগতে পারে। যে কেউ বাসায় বসে এই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। কারও যদি করতে সমস্যা হয়, তাহলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আমাদের টিম থাকবে, তারা সহযোগিতা করবে। তবে রেজিস্ট্রেশন করতে প্রত্যেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লাগবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকাদের জন্য কি ব্যবস্থা থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাদের বয়স ১২ বছরের নিচে, যারা গর্ভবতী এবং যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তাদের টিকা দেওয়া হবে না। এর বাইরে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তাদের ব্যাপারে দ্বিতীয় ধাপে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২৫ জানুয়ারির মধ্যেই আসছে টিকা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ২১-২৫ জানুয়ারির মধ্যেই দেশে করোনাভাইরাসের টিকা আসবে।
তিনি বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চুক্তি হয়েছে। বেক্সিমকো জানিয়েছে, সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের টিকা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই আমরা টিকা পেয়ে যাব।
তিনি আরও জানান, মোবাইল ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে সবাই নিজ থেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। অ্যাপটা সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। যারা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন তাদেরও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
কীভাবে হবে নিবন্ধন?
ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে ব্যবহারকারীরা অ্যাপে নিবন্ধন করবেন। নিবন্ধন করার সময় নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি নম্বর, অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা রয়েছে কিনা, পেশা ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। তবে কারা আগে টিকা পাবেন, সেই অগ্রাধিকারের তালিকা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে সংগ্রহ করা হবে।
প্রত্যেক ব্যক্তি করোনাভাইরাসের দুটি করে ডোজ পাবেন। তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের বিস্তারিত তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে। ভারতেও টিকাদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে এরকম একটি অ্যাপের ব্যবহার করা হচ্ছে।
কোথায় পাওয়া যাবে অ্যাপ?
অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল- উভয় স্টোরেই এ অ্যাপটি পাওয়া যাবে। স্মার্ট ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এ অ্যাপটি তৈরির কাজ শেষ করেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের মডিফিকেশন বা রূপান্তরের কাজ।
টিকাদান কার্যক্রম শুরুর অন্তত দু'সপ্তাহ আগে অ্যাপটি সবার জন্য উন্মুক্তের পরিকল্পনা করছেন কর্মকর্তারা।
কীভাবে টিকা দেওয়া হবে?
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয়ভাবে টিকাদানের খসড়া পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই অনুযায়ী সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ভ্যাকসিন বণ্টন করা হবে।
সেক্ষেত্রে প্রথমেই রয়েছে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখ সারিতে থাকা কর্মী এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল রোগীরা। দ্বিতীয় ধাপে থাকবে বয়স্ক, স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে এমন বয়স্ক মানুষ, শিক্ষাকর্মী, গণপরিবহনের কর্মীরা।
তিন পর্যায়ে মোট পাঁচটি ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।
যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে তিন শতাংশ বা ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে সাত শতাংশ বা এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে টিকা দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি ধাপে ১১-২০ শতাংশ বা এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ টিকা পাবেন।
তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে মোট দুটি ধাপে টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১-৪০ শতাংশ বা তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজারের বেশি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪১-৮০ শতাংশ বা ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।
দু'জন টিকাদানকর্মী ও চার জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মোট ছয় জন করে একেকটি দল তৈরি করা হবে যারা এ টিকাদান কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে পরিচালনা করবেন। প্রতিটি দল প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনকে টিকা দিতে পারবে বলে ধরা হয়েছে।
ছয় জনের দলগুলোতে এক জন নারী ও একজন পুরুষ টিকাদানকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে কমপক্ষে এক জন নারী থাকবেন।
টিআই/এসআরএস