আজ শহীদ আসাদ দিবস
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে শহীদ আসাদের বেদী
আজ ২০ জানুয়ারি, শহীদ আসাদ দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দেন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান। সেদিন থেকেই এ বীর সেনানীর স্মরণে দিনটি শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে যে কয়জন পথিকৃৎ তাদের মধ্যে শহীদ আসাদকে স্মরণ করে বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ আসাদের অসামান্য অবদান দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ আসাদ একটি অমর নাম। গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ আসাদের অসামান্য অবদান দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক।
দেশে গণতন্ত্রের ইতিহাসে শহীদ আসাদ দিবস একটি অবিস্মরণীয় দিন জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবির মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী শহীদ আসাদ এ দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার আত্মত্যাগ ভবিষ্যতেও আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রেরণা যোগাবে। শহীদ আসাদসহ বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আসাদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর আরও অনেক প্রাণ ঝরে পড়ে এবং আহত হন। শহীদ আসাদের এ আত্মত্যাগ স্বাধীনতার দাবিতে চলমান আন্দোলনে নতুনমাত্রা যোগ করে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং দমন পীড়নে বাংলার মানুষ যখন দিশেহারা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ছয়দফা তখন বাঙালির মুক্তির দিশারি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ছয়দফা হয়ে ওঠে বাঙালির প্রাণের দাবি। বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন নতুনমাত্রা পায়। বঙ্গবন্ধু পরিণত হন নিপীড়িত ও নির্যাতিত বাঙালির মুক্তির মূর্তপ্রতীকে।
স্বাধিকারের দাবিতে সোচ্চার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জেল-জুলুম উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পর্যায়ক্রমে আন্দোলন তীব্রতর আকার ধারণ করে। সেদিনের আন্দোলন পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। পাকিস্তানি স্বৈরসরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পতন হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার (২০ জানুয়ারি) নানা কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ছাত্র সংগঠনগুলো। সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে শহীদ আসাদের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার স্মরণে শোক র্যালি করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করছে গণ-সংস্কৃতি ফ্রন্ট।
শহীদ আসাদ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন।
আসাদ শহীদ হওয়ার পর তিনদিনের শোক পালন শেষে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথে। সংঘটিত হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। পতন ঘটে আইয়ুব খানের।
আরেক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ১৯৭০ সালের সেই অভূতপূর্ব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু ইয়াহিয়া ক্ষমতা না ছাড়ার জন্য নানা টালবাহানা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
এনএম/এমএইচএস