মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার

মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ঢাকা জেলায় এক হাজার ৫০টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য দুই শতাংশ জমিসহ ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) ঢাকা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় ১৯৮টি, নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৭৭০টি, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ৫টি, সাভার উপজেলায় ৪১টি এবং ধামরাই উপজেলায় ৩৬টি গৃহ বরাদ্দ করা রয়েছে।

• ২৩ জানুয়ারি প্রথম ধাপে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ঘর পাচ্ছে
• প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব ঘর হস্তান্তর করবেন
• ২০২০ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, কেউ গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, প্রতিটি গৃহে বিদ্যুৎ সংযোগ, গভীর নলকুপ এবং স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলাচলের সুবিধার জনা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।

শহীদুল ইসলাম বলেন, যারা রাস্তায়, বস্তিতে থাকতেন তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার। আমরা চাই দেশের একজন মানুষও যেন গৃহহীন না থাকেন। তাই এই গৃহনির্মাণ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যে মানসিক তৃপ্তি পেয়েছি তা অন্য কোথাও পাইনি।

জানা গেছে, শনিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রথম ধাপে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার বঙ্গবন্ধু কন্যার উপহারের ঘর পাচ্ছেন। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর দেওয়া হবে। এছাড়া ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি গ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এসব ঘর সুবিধাভোগীদের কাছে হস্তান্তর করবেন।

একসঙ্গে এত মানুষকে জমি ও ঘর দেওয়ার ঘটনা বিশ্বে প্রথম ও অনন্য।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস

এদিকে বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, মুজিববর্ষে একসঙ্গে এত মানুষকে জমি ও ঘর দেওয়ার ঘটনা বিশ্বে প্রথম ও অনন্য।

তিনি বলেন, তিনটি প্রকল্পে ১ হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার।

মূখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৪ হাজার ৫৩৮টি পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৮ হাজার ৫৮৬টি পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের মাধ্যমে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৬৫টি পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

আহমেদ কায়কাউস বলেন, এটি একটি সামাজিক যুদ্ধ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যদি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়, তাহলে মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।

পর্যায়ক্রমে সব ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন, সহকারী প্রেস সচিব এমএম ইমরুল কায়েস প্রমুখ।

গৃহ ও ভূমিহীন পরিবার
ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার ৮৮টি উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫৭৪টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৮৯ হাজার ৬২৩টি। সর্বমোট ১ লাখ ২৯ হাজার ১৯৭ টি।

ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার ৩৫ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ১০ হাজার ৬৬৫টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ২৫ হাজার ৩৩৮টি। সর্বমোট ৩৬ হাজার ৩টি।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার ১০৩টি উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৬১ হাজার ৫৩০টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৯৯ হাজার ৭৬৭টি। সর্বমোট ১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৭টি।

রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৫৮ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৯৯৮টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৬টি। সর্বমোট ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪টি।

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার ৬৭ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৫৭০টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৫৮ হাজার ৯৩৪টি। সর্বমোট ৯৬ হাজার ৫০৪টি।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৫৯ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৬৬টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ৪৪৫টি। সর্বমোট ১ লাখ ৪২ হাজার ৪৪১টি।

বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪২ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২৭ হাজার ৩২৮টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৫৩ হাজার ২৫৬টি। সর্বমোট ৮০ হাজার ৫৮৪টি।

সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ৪০ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৩০টি। জমি আছে ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ২৮ হাজার ৬২টি। সর্বমোট ৫৫ হাজার ৭৯২টি।

সারাদেশের ৬৪ জেলার ৪৯২ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি। সর্বমোট ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২ টি।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপকারভোগী পরিবারের কাছে গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এ অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলার সকল উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সিং এ বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকগণ সংযুক্ত থাকবেন।

২০২০ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, দেশের একটি মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। তার এ ব্রতকে সামনে রেখে মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছে দুর্যোগ সহনীয় সেমিপাকা ঘর আর দুই শতাংশ জমির মালিকানা। সারাদেশে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের এই মহাযজ্ঞ মনিটরিং করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টিএইচ/এইউএ/এইচকে