১৮১৮ ভবনের ক্রটি পরিদর্শনেই শেষ রাজউকের পদক্ষেপ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর রাজধানীর ভবনগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজতে বহুতল ভবনগুলো পরিদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বহুতল ভবন নির্মাণসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় খতিয়ে দেখতে সেসময় আট জোনে ২৪ টিম গঠন করে ১০ তলার অধিক উচ্চতার এক হাজার ৮১৮ ভবন সরেজমিন পরিদর্শন করে। প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভবনের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ১৮১৮ বহুতল ভবনের তথ্য সংগ্রহ করে। যার মধ্যে এক হাজারের বেশি ভবনের ত্রুটি পায় রাজউক।
কিন্তু রাজউকের এই পদক্ষেপ পরিদর্শন পর্যন্তই। আটকে যাওয়া এই পদক্ষেপের ফলাফল আর আলোর মুখ দেখেনি। এক হাজার ৮১৮ ভবন পরিদর্শনেই মধ্যে শেষ হয়ে যায় তাদের এ উদ্যোগ। এছাড়া যেসব ভবনে ক্রটি পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি রাজউক।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, রাজধানীতে ঠিক কতটি ভবন অনুমোদিত নকশার বাইরে নির্মিত হয়েছে, সে বিষয়ে সঠিক কোনও তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি রাজউক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, নগরীতে বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা অবকাঠামোর সিংহভাগই অপরিকল্পিত।
রাজউকের ২৪টি দল এক হাজার ৮১৮ ভবন পরিদর্শনের সময় ৪৭৮ ভবন মালিক তাদের ভবনের অনুমোদিত নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। রাজউকের পরিদর্শন করা বহুতল ভবনের মধ্যে রাজউকের অনুমোদিত নকশা আছে ১১৩৬টির। রাজউক ব্যতীত অন্যান্য সরকারি সংস্থার অনুমোদিত ভবন রয়েছে ২০৭টি। এক হাজার ৮১৮ ভবনের মধ্যে ৪৩১টি ভবনের মালিক রাজউকের অনুমোদিত নকশা দেখাতে পারেননি। এছাড়া সরকারি অন্যান্য সংস্থার অনুমোদিত ভবনগুলোর মধ্যেও ৪৪টি নকশা দেখাতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
সে সময় এসব ভবন মালিকদের রাজউকের পক্ষ থেকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর প্রায় দুই বছর পার হলেও সে বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে রাজউকের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রক মোবারক হোসাইন বলেন, গঠিত সেই কমিটির সুপারিশের অপেক্ষায় আছি। কমিটির সুপারিশ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন সময় আমরা নকশা বহির্ভূত বিভিন্ন ভবনের বিষয়ে পদক্ষেপ বা অভিযান নিতে চাইলেও ফোর্স, ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্কটের কারণে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি রাজউকের অনুমোদন ছাড়া বা নকশা বহির্ভূত, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠে নামব।
তবে নগর পরিকল্পনাবিদদের অভিযোগ, রাজউকের প্রধান কাজ রাজধানীতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তদারকি করা। কিন্তু তা না করে সংস্থাটি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। সঠিক মনিটরিং না থাকায় দুর্নীতির মাধ্যমে অনুমোদন পেয়ে প্রতি বছরই রাজধানীতে অনেক নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা চূড়ান্ত করতে চেয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। কিন্তু খসড়া নীতিমালার বিভিন্ন অংশ নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদদের আপত্তির কারণে তা আপতত থেমে যায়। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে বিধিমালাটি এখন যে পর্যায়ে আছে তা পরিপক্ব নয়। এই অপরিপক্ক নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হলে তা আধুনিক নগর গঠনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে ঢাকার কোন এলাকা আবাসিক, কোন এলাকা বাণিজ্যিক, আবার কোন এলাকা মিশ্র, কোনটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত এলাকা হবে, এ বিষয়ে নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব করেছে রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)। এ কাজে ঢাকাকে ১৩ ধরনের ভূমি ব্যবহার জোনে ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশোধিত ড্যাপ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করছি। এতে মানুষ তার নিজের ও আশপাশের ভূমির ব্যবহার এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে মুহূর্তেই জানতে পারবেন। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ওয়ার্ডভিত্তিক করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঢাকার ভেতরে ৫৬৬ কিলোমিটার নদীপথ নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটা বাস্তবায়ন হলে একটি সুন্দর ঢাকা গড়ে তুলতে পারব আমরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আমরা চাই সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর ড্যাপ। আমাদের পক্ষ থেকে মতামত ও প্রস্তাবনা দিয়েছি রাজউককে। আমরা একটি সুন্দর মাস্টার প্ল্যান চাই। যার ভিত্তিতে সুন্দর ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে উঠবে। আশা করি, ড্যাপ বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়গুলো অনুধাবন করবেন।
এএসএস/ওএফ