রাজধানীর মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডে উদয়াচল পার্কের কাজ শেষ হয়েছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর পার্কটি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যেমে সর্বসাধারণের জন্য পার্কটি উন্মুক্ত করে দিবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

গুলশানে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন পার্কসহ অল্প কয়েকটি পার্কের কাজ শেষে খুলে দেওয়া হলেও ডিএনসিসির পার্ক-মাঠের উন্নয়ন- সংস্কার প্রকল্পের কাজ ব্যাপক ধীরগতিতে চলছে। সংস্কারের মাধ্যেমে পার্ক-মাঠগুলোর কাজ শেষ হলে সেখানে ওয়াকওয়ে, সাইকেল ট্র্যাক, ফোয়ারা, শিশুদের রাইড, শরীরচর্চার ব্যবস্থা, নারীদের বসার স্থান অন্তর্ভুক্ত থাকবে। 

এছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম থাকছে। প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য পার্ক ও খেলার মাঠের আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। সব বয়সী মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থার পাশাপাশি সবুজায়নের সঙ্গে বিশ্রামের ব্যবস্থা, সাইকেলপ্রেমীদের আলাদা লেন, খেলাধুলাসহ শরীরচর্চার জন্য ব্যায়ামাগার সুবিধাও পাওয়া যাবে। পার্কগুলোতে অধিক গাছ রোপণের পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন, উন্নত টয়লেট স্থাপন, সুপেয় পানির সুবিধা পাওয়া যাবে। সন্ধ্যার পর নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য পার্কের ভেতর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় থাকা পার্ক ও খেলার মাঠগুলোর দিকে নজর দেয় ডিএনসিসি। আধুনিকায়ন ও সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন রুপে ২২টি পার্ক ও চারটি খেলার মাঠগুলোর মধ্যে কয়েকটি সংস্কারের কাজ শুরু করে। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, অবৈধ দখলদারিত্ব, ঠিকাদারদের গাফিলতি ও প্রভাবশালীদের বাধার কারণে পার্ক-খেলার মাঠ উন্নয়ন  প্রকল্পে ধীরগতি সৃষ্টি হয়। কয়েকটি পার্ক ও খেলার মাঠের কাজ প্রায় শেষের দিকে হলেও এখনও অনেকগুলোর কাজ বাকি।

পার্ক-মাঠগুলোর উন্নয়ন কাজ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রকল্পের পরিচালক তারিক বিন ইউসুফ বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানামুখী বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মেয়রের সহায়তায় সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে। এসব বাধা মোকাবেলা করতে গিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগছে। এই কাজগুলো শুরু হতেই অনেক সময় লেগে গেছে প্রথমে।

তিনি আরও বলেন, এসব মাঠ ও পার্কের নকশা প্রণয়নে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত নেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে, তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রক্রিয়া করতে অনেকবার মতবিনিময় করতে হয়েছে। কারিগরী কারণে নকশাতেও অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে। আশা করা যায় আমরা খুব দ্রুত উন্নয়ন কাজ শেষ করে উন্মুক্ত করে দিতে পারব।

এদিকে পার্ক-মাঠের মধ্যে বনানী ১৮ নম্বর খেলার মাঠ, বনানী সি-ব্লক খেলার মাঠ, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি খেলার মাঠ, বনানী এফ-ব্লকের মাঠ, শ্যামলী পার্ক, রায়ের বাজার বৈশাখী মাঠ, লালমাটিয়া ত্রিকোণ পার্ক, লালমাটিয়া ডি-ব্লক খেলার মাঠ ও কারওয়ান বাজার পার্কের বেশ কিছু কাজ শেষে আরও উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। বাকিগুলোর কাজও চলছে তবে সেগুলো আরও ধীরগতিতে।  

পবা’র সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ঢাকা শহরে মাঠ ও পার্ক দেখাশুনা করার জন্য প্রায় ১১টি সংস্থা রয়েছে। তাদের উচিত সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। উন্নয়ন কার্যক্রমের পরে মাঠের সার্বজনীনতা যদি কিছুটা কমে যায়, তাহলে সে ধরনের উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। নদী দখলকারীদের যেভাবে সরকার উচ্ছেদ করছে ঠিক তেমনি মাঠ ও পার্কগুলোকে দখলমুক্ত করতে হবে। মাঠ ও পার্কের সকল উপকরণ সার্বক্ষণিক ব্যবহার উপযোগী রাখা প্রয়োজন।

পার্ক, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত গণপরিসর নগরজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ তাই পার্ক ও খেলার মাঠ নগরবাসীর সামাজিকীকরণ, বিনোদন, খেলাধুলা, মানসিক প্রশান্তি এবং শরীরচর্চার ক্ষেত্র সৃষ্টি করে বলে উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন পরিবেশবিদরা। সেই সঙ্গে মাঠ-পার্ক উন্নয়ন পরিকল্পনায় সকলের ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, দিনে দিনে শহরের পার্ক বা উদ্যানে বিনোদন বা সামাজিক কার্যক্রমগুলোর পরিধি ক্রমশই সংকুচিত হচ্ছে। অথচ এই পার্ক বা উদ্যান নগর জীবনে কিছুটা হলেও প্রাণের সঞ্চার করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একটি শহরে প্রতি একজন নাগরিকের জন্য ৯ বর্গমিটার সবুজ পরিসর প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা শহরে প্রতি একজন নাগরিকের জন্য মাত্র ০.০৫২ বর্গমিটার সবুজ পরিসর রয়েছে। গণপরিসর বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আমাদের জোড় দিতে হবে।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, জনসংখ্যার হিসাবে ঢাকা শহরে ১ হাজার ৩০০ খেলার মাঠ থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২৩৫টি। যেসব খেলার মাঠ ও পার্ক আছে সেগুলো সব বয়সী নাগরিকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন।

এএসএস/ওএফ