নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ বন্ধের দাবি
কক্সবাজারের কোহেলীয়া নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
অবিলম্বে কক্সবাজারের কোহেলীয়া নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ বন্ধসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও জাতীয় নদী জোট। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংগঠন দুটির যৌথ আয়োজনে ঢাকায় জাইকার অর্থায়নে কক্সবাজারের কোহেলীয়া নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নদী জোটের আহ্বায়ক ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ বলেন, দেশে নদী রক্ষা আইন আছে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন নাই। আইন মানার প্রবণতা সবার মাঝে তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব। জেলা প্রশাসকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। কারণ তারা হাইকোর্টের রায় থাকার পরেও দেশের নদীগুলো রক্ষা করতে পারছে না।
বিজ্ঞাপন
তিনি জাইকার নীতির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, JICA is determined to protect our global environment that is extremely vital for the survival of mankind and natural life on earth. It also seeks the balance among environmental conservation, social prosperity and sustainable development….JICA will consistently adhere to relevant environmental laws and regulations, oct 1, 2015.
জাপানীদের শক্ত পরিবেশ নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদী ধ্বংস করে এমন ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প তারা কখনো নিজদেশে করবে না। তবে কেনো তারা বাংলাদেশে নীতিবিরোধী কাজ করছে। এটা আমরা মানতে পারি না। আদালত আমাদের নদীগুলোকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাই কোহেলীয়া নদীর সঙ্গে যা হচ্ছে, তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত।
বিজ্ঞাপন
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো দেশের আদালত প্রচলিত অনেক আইন, অধ্যাদেশ ও সরকারি নির্দেশনার উপেক্ষা করে চলমান দখল, দূষণ ও অন্যান্য নদী বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি সময়ে নদী-বিপর্যয় এতই মারাত্মক আকার ধারণ করে যে, মহামান্য উচ্চ আদালত নদী রক্ষায় কয়েকটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেন। সুপ্রিম কোর্টের ২০২০ সালে দেওয়া নদী বিষয়ক রায় অনুযায়ী নদীর জমি কোনো অবস্থায়ই কারও কাছে বিক্রয় বা লিজ দেওয়া যাবে না। এমনকি ভরাট করাও গুরুতর অপরাধ।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, গত এক হাজার বছরে পনেরশো নদী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যার গড় প্রায় ১.৫টি নদী। আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু পরিবেশ ও নদীকে ধ্বংস করে নয়। যেখানে সরকার কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প কমিয়ে আনছে, সেখানে জাইকা কিভাবে এ ধরনের কাজের অনুমোদন পায়? চট্টগ্রামের চেয়ে কক্সবাজারে বায়ুদূষণের পরিমাণ অনেক বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ সমুদ্র সৈকত পর্যটক শূন্য হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলন জানানো তাদের অন্যান্য দাবি গুলো হচ্ছে- নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ কাজের স্বচ্ছ তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দেওয়া; কোহেলিয়া নদী ও তৎসংলগ্ন সকল খাল ও প্লাবন অঞ্চল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা; যেকোনো বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের আগে সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং আদালতের রায় যথাযথভাবে মেনে কোহেলিয়াসহ দেশের সকল নদী ও জলাশয় পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, জাতীয় নদী জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সেবার নির্বাহী পরিচালক সাঈদা রোকসানা খান শিখা, যুব বাপা কর্মসূচির সদস্য সচিব ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী রাওমান স্মিতা প্রমুখ।
এইচএন/এমএইচএস