‘সর্দার’ মালার বাসায় ছিনতাই-ডাকাতির মালামাল ভাগ-বাটোয়ারা
কোহিনুর বেগম ওরফে মালা। রাজধানীর মুগদা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তার ওই বাসা রাজধানীর ডাকাত-ছিনতাইকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ওই বাসাতেই ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের বিভিন্ন মালামাল ভাগ-বাটোয়ারা হয়। এমনকি কোনো ডাকাত-ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হলে আদালত থেকে ছাড়িয়ে আনতে টাকা-পয়সা খরচ ও তদবির করেন ডাকাতদলের সর্দার মালা।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম। রাজধানীতে ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরি প্রতিরোধে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা রমনা বিভাগের রমনা জোনাল টিম মুগদা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাতদের আশ্রয়দাতা মালাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। অন্যরা হলেন- রাসেল মাহমুদ, মাসুদ মিয়া, শামীম, আমিনুল ইসলাম হৃদয়, পারভেজ, শহিদুল, বাবু ওরফে ব্লেড বাবু ও জয় মিয়া। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি চাপাতি ও দুটি ছোরা উদ্ধার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
মাহবুব আলম বলেন, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাতদের আশ্রয়দাতা মালাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গােয়েন্দা রমনা বিভাগ। মঙ্গলবার মুগদা থানা এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মালার নামে একাধিক ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। এমনকি শাহবাগে ডাকাতির পর হত্যার ঘটনাতেও মালার নাম উঠে আসে। মালা ও তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতদলের পৃষ্ঠপােষকতা করে আসছিল। ডাকাতদলের কোনো সদস্য গ্রেপ্তার হলে তাদের জামিনে ব্যবস্থা বা কোনো বিপদে পড়লে সবধরনের সহযােগিতা দিয়ে থাকেন। এই সহযােগিতার জন্য তারা লুণ্ঠিত মালামালের বড় অংশের ভাগ পেতেন।
প্রভাবশালীরা ডাকাতদের পৃষ্ঠপোষকতা করত কিনা ও তারা আইনের আওতায় আসবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতিদের প্রভাবশালী কেউ পৃষ্ঠপোষকতা করত না। তবে কয়েকজনকে পেয়েছি যারা তাদের বিভিন্নভাবে সহয়তা করত। তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
যাত্রীদের চোখে-মুখে মলম বা স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে ছিনতাই
পৃথক অভিযানে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে বিশেষ অভিযানে অজ্ঞান পার্টির ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গােয়েন্দা রমনা বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন- মােজাম্মেল হােসেন ওরফে মুজা, কালু, ইলিয়াস, আনোয়ার হােসেন, সুমন হোসেন, ইকবাল হােসেন, মিটন, রবি আউয়াল ও হেলাল। এসময় তাদের কাছ থেকে অজ্ঞান করার পাঁচটি স্প্রে, চারটি মােস্তফা গুল, চারটি জাম-বাগ মলম, চারটি পাগলা মলম ও জিপারে তিন প্যাকেটে মরিচের গুড়া জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা জানায়, তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় কাউকে টার্গেট করত। টার্গেটকৃত ব্যক্তি যখন বাসে উঠে তখন তারা সুযােগ বুঝে কৌশলে বাস যাত্রীদের চোখে-মুখে মলম বা স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে তাদের সঙ্গে থাকা সবকিছু নিয়ে যায়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে।
বাসে মোবাইলে কথা বলতে গেলে যাত্রীদের মোবাইল ছিনতাই
অপর এক অভিযানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ মােবাইল চোর চক্রের ছয় সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মতিঝিল গোয়েন্দা বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ টিম। জানা গেছে, ছিনতাইকারীরা টার্গেট করে বাসের যাত্রীদের মোবাইল ছিনতাই করত। এ সময় তাদের থেকে ৩০টি চোরাই মােবাইল উদ্ধার করা হয়। বুধবার তেজগাঁওয়ের টিসিবি কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- রবিন ওরফে নবী, ছাঈদ, রুনা ওরফে রােজিনা, মনােয়ার, রুবেল মিয়া ওরফে হাসান ও আলামিন।
গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, আসামিরা পেশাদার সংঘবদ্ধ চোরাই চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ বিষয়ে তেজগাঁও থানায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
জেইউ/ওএফ