চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে সহিংসতার দায় কার?
ভোটের দিন সকালে খুলশী থানাধীন ইউসেপ আমবাগান টেকনিক্যাল স্কুল কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষে প্রাণ হারান আলাউদ্দিন আলু নামে এক রিকশাচালক। তার এক স্বজনের আহাজারি
• বিএনপির সুনির্দিষ্ট ১৮টি অভিযোগ
• ক্ষমতাসীন আ.লীগেরও লিখিত অভিযোগ ইসিতে
• দুই দলের অভিযোগের পর দায় এড়ানো বক্তব্য ইসি সচিবের
• ইসি কোনোভাবেই নির্বাচনে সহিংসতার দায় এড়াতে পারে না : সুজন সম্পাদক
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে গতকাল (বুধবার) সিটি নির্বাচন চলাকালে বেশ কিছু স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ সহিংসতার দায় কার? নির্বাচন শেষে এ প্রশ্নের উত্তর খোদ নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ও দিতে পারছে না।
বিজ্ঞাপন
মাঠের রাজনীতির প্রধান দুই বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ সিটি নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে ইসিতে। কিন্তু দুই দলের সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ থাকলেও ইসির সিনিয়র সচিব তা অস্বীকার করে বলছেন, ভোটার উপস্থিতি কম হলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
ভোট চলাকালে বুধবার দুপুরেই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ইসি সচিবের কাছে ১৮টি সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের পর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ইসির কর্মকর্তারা মিলে জালিয়াতির নির্বাচন করছে। নির্বাচনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পুলিশি তাণ্ডব চলছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে তামাশা করছে ইসি।
বিজ্ঞাপন
রিজভী অভিযোগ করেন, নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির সন্ত্রাসের নির্বাচন হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র হত্যাকারী ঘাতক বলে অভিহিত করেন তিনি। তিনি জানান, ভোটের ৩ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত চিত্র ইসি সচিবের কাছে দিয়েছি। এটা নজিরবিহীন নির্বাচন। দিনের ভোট রাতে হয়। প্রায় প্রত্যেকটি কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে সহিংসতায় দুজন মারা গেছেন। সরকার প্রধানের হুকুমে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে হত্যা করে ঘাতক হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
এদিকে বিএনপির অভিযোগের পর ইসি সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। যে দলই হোক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে ভাসা ভাসা অভিযোগে ইসি কোনো পদক্ষেপে যাবে না।
ইসি কোনোভাবেই নির্বাচনে সহিংসতার দায় এড়াতে পারে না
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার
অন্যদিকে বিকেল ৩টার দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বিভিন্ন কেন্দ্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে বিএনপি। বিএনপি প্রায় ৪০টি ওয়ার্ডে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সহিংসতা করেছে।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি জানান, দুয়েকটি অভিযোগ ইসির কাছে দিয়েছি। বিএনপি সন্ত্রাসীরা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের ছেলেকে ছুরিকাঘাত করেছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইভিএম ভেঙে ফেলেছে ও কেন্দ্র দখল করেছে। আমবাগান এলাকায় বিএনপি সন্ত্রাসীরা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে বলে ইসিকে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনের আগের দিন ইসির জ্যেষ্ঠ কমিশনার মাহবুব তালুকদা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, চসিক নির্বাচনে পক্ষ-বিপক্ষের ভারসাম্য সৃষ্টিই বড় চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অপরিহার্য, নইলে তা ভণ্ডুল হয়ে যাবে।
মাহবুব তালকদার আরও বলেছিলেন, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যকালের অবশিষ্ট সময়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার শঙ্কা ও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পরিবেশ সুষ্ঠু না হলে অবাধ নিরপেক্ষ আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় এবং নির্বাচনের পূর্বশর্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ধারণাও অবান্তর হয়ে যায়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন দল ও মত নির্বিশেষে সবার জন্য দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষা।
নির্বাচনের দিন সহিংসতার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, দুটি কেন্দ্রে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন আক্রমণ করে ইভিএম ভেঙে দিয়েছে। যার ফলে ওই দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন হয়েছে। যারা ভোট দিতে এসেছিলেন, তারা ভোট দিয়ে গেছেন।
নির্বাচনের দিন সকালে দুইজনের নিহতের বিষয়ে সচিব বলেন, আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।
তবে ইসি সচিবের এমন বক্তব্য মেনে নেয়নি বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সিনিয়র মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী নিজে গিয়ে ইসিতে লিখিত অভিযোগ সচিবের কাছে দিয়ে এসেছে। তারপরও যদি এটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না হয় তাহলে তো এটা বোঝাই যায় ইসি কার পক্ষ নিয়ে কাজ করছে।
মাঠের রাজনীতির প্রধান দুই বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইসিতে লিখিত অভিযোগ দিলেও ইসি বলছে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তারা পায়নি- চসিক নির্বাচনের এ ঘটনার বিষয়ে সুশাসানের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমার প্রশ্ন হলো ইসি কি কানা, বধির নাকি প্রতিবন্ধী? তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন করা। অভিযোগ নেওয়া নয়। যদি সুষ্ঠু নির্বাচনে নজর না দিয়ে বসে বসে অভিযোগ নেয় তাহলে এটা আত্মঘাতী। আমি বলবো, ইসি কোনোভাবেই নির্বাচনে সহিংসতার দায় এড়াতে পারে না।
৩ লাখ ৬৯ হাজার ভোট পেয়ে চট্টগ্রামের নগরপিতা রেজাউল
ভোট দিয়েই রেজাউল বলেছিলেন জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি। হলোও তেমনটাই। চট্টগ্রামের নতুন এই নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির (ধানের শীষ প্রতীক) প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত আছে দুই কেন্দ্রের ফল ঘোষণা। এ নির্বাচনে সব কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ হয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ভোট ঘিরে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
এসআর/এনএফ