>> খসড়া নীতিমালা নিয়ে মত দেওয়া যাবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত

>> ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের লাইফটাইম হবে ১২ বছর

>> মোটরযানে খোদাই করা থাকবে আলাদা চেসিস নম্বর

গত ১১ বছরে সারাদেশে ইঞ্জিনচালিত মোটরযান তিনগুণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ। এসব মোটরযানে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। এ থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে সরকার এবার বিদ্যুৎচালিত মোটরযানের নিবন্ধন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ধরনের যান নিবন্ধন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

২৪ নভেম্বর নীতিমালার খসড়াটি অংশীজনদের মতের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মত দেওয়া যাবে। এ নীতিমালার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১’।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবেশ বাঁচাতে পরিবেশবান্ধব যানবাহন বাড়াতে হবে। আমরা এজন্য বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় খসড়া নীতিমালা করেছে। চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ আলাদা নীতিমালা করবে।

নীতিমালার খসড়া থেকে জানা গেছে, বিদ্যুৎচালিত মোটরযানে খোদাই করা থাকবে আলাদা চেসিস নম্বর। তা থাকবে নির্ধারিত ডিজিটের। যানের মোটরে থাকবে নম্বর। এ ধরনের যান অকেজো বা ব্যবহারের অনুপযোগী হলে প্রতিস্থাপন করা যাবে। এসব মোটরযানে চার্জিং পদ্ধতি দেশের প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। উষ্ণায়ন রোধে ইঞ্জিনহীন মোটরযান ব্যবহার উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকার সম্প্রতি অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালায় ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদিত ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের একটি বড় অংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী ইলেকট্রিক মোটরযানে রূপান্তরের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় ‘ইলেকট্রিক মোটরযান’ বলতে এক বা একাধিক বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে চালিত মোটরযান— যার চালিকাশক্তি ওই মোটরযানে যুক্ত রিচার্জেবল ব্যাটারির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়- তা বোঝানো হয়েছে। কিন্তু ব্যাটারিচালিত বাইসাইকেল বা রিকশা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

বোঝাই অবস্থায় সরকার বা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত গতিসীমায় বা আইনে উল্লিখিত গতিতে চলাচলের সক্ষমতা ইলেকট্রিক মোটরযানের থাকতে হবে। যানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ওভার হ্যাঙসহ অন্যান্য পরিমাপের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে বলেও খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।

নীতিমালা থেকে জানা গেছে,  ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের প্রচলিত রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি অনুযায়ী ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ট্যাক্সটোকেন, রুট পারমিট যে ফরম্যাটে দেওয়া হচ্ছে, ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে একই ফরমেট ব্যবহারযোগ্য (ইঞ্জিন সম্পর্কিত বিষয়াদি ব্যতীত) হবে।

কর্তৃপক্ষ বা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি (আরটিসি) নির্ধারিত সিলিং অনুযায়ী থ্রি-হুইলার ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। বাজারজাতকরণ বা রেজিস্ট্রেশনের আগে প্রস্তুতকারক, সংযোজনকারী, আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানকে বিআরটিএ থেকে ইলেকট্রিক মোটরযানের মডেলভিত্তিক ‘টাইপ’ অনুমোদন নিতে হবে। এ অনুমোদন দেওয়ার  ক্ষেত্রে বিআরটিএ প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ডিলার, এজেন্ট, আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারক ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ও মোটরসাইকেল ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে ‘ইকোনোমিক লাইফ’ অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদে ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। ইলেকট্রিক মোটরযান বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের লাইফটাইমের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের জীবনকাল হবে ১২ বছর ও থ্রি হুইলারের ১০ বছর; হালকা, মধ্যম ও ভারী মোটরযানের ক্ষেত্রে তা হবে ২০ বছর।

ইলেকট্রিক মোটরযান নিবন্ধনের পক্ষে খসড়া নীতিমালায় যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে— 

সাম্প্রতিককালে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন একটি বহুল আলোচিত বিষয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাইক্লোন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এসব কারণে পৃথিবীব্যাপী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হ্রাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল কারণ হলো, বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।  এ গ্যাসের অন্যতম উৎস হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত মোটরযান। ইঞ্জিনচালিত মোটরযানে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরিত হয়।

ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণও বাড়ছে। মোটরযান থেকে এ গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধ করা যায়। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ইঞ্জিনবিহীন ইলেকট্রিক মোটরযান ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

ইলেকট্রিক মোটরযানে সরাসরি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার প্রয়োজন হয় না। ফলে এ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা দহনজনিত অন্য কোনো ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরিত হয় না। তাছাড়া, এ থেকে কোনো শব্দদূষণও হয় না। সার্বিকভাবে ইলেকট্রিক মোটরযান পরিবেশবান্ধব। এ কারণে ইলেকট্রিক মোটরযান ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন।

খসড়া নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, সরকার পরিবহন খাত থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ শর্তহীনভাবে কমানোর অঙ্গীকার করেছে। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ১২৪ ধারা মোতাবেক ‘ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

পিএসডি/আরএইচ