টিকা প্রয়োগ চলছে - ছবি : ঢাকা পোস্ট

প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলায় কাঙ্ক্ষিত টিকায় ভরসা রাখছে বিশ্ব। বহুল প্রতীক্ষিত টিকা ইতোমধ্যে চলে এসেছে বাংলাদেশেও। ভারত থেকে আসা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে দেশে। ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধনের পর টিকা নিয়ে ভয় ও শঙ্কা কাটতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষের মন থেকে। এদিকে টিকা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ডাক্তাররা। 

করোনাকে পরাজিত করার দিন শুরু হলো।

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার বণিক, টিকা নেওয়ার পর

প্রাণঘাতী করোনা প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর ৫টি হাসপাতালে মন্ত্রী, আমলা, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৫ শতাধিক ব্যক্তি টিকা নিয়েছেন। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক), মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ৫৪১ ব্যক্তি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সার্ভিসের তথ্য মতে, রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ৩৮ জন চিকিৎসক ও ৩ জন নার্সসহ মোট ৫৮ জন। টিকা নিয়ে তারা সবাই বেশ খুশি। এ সময় তাদের মুখে ছিল হাসি। 

টিকা নেওয়ার পর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও চিকিৎসক ডা. চন্দন কুমার বণিক বলেন, করোনাকে পরাজিত করার দিন শুরু হলো। করোনায় আমিও আক্রান্ত হয়েছিলাম। টিকা আসায় দেশের সাধারণ মানুষের করোনা-ভোগান্তি নিয়ে যে দুশ্চিন্তা তা থেকে অনেকটাই মুক্ত হলাম।   

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদানের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। এখন থেকে চিকিৎসাকর্মীরা রোগীদের সেবা দিতে আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম হাবিবুল্লাহ

একই হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম হাবিবুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদানের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।

তিনি বলেন, শুরুতে অনেকেই টিকা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আমরা তো চিকিৎসাশাস্ত্রের মানুষ। আমরা বুঝি যে, এই টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এখন থেকে চিকিৎসাকর্মীরা করোনা রোগীদের সেবা দিতেও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।

টিকা নেওয়ার পর অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিকা নেওয়ার পর স্বাভাবিক আছি। শরীরে আলাদা কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। বরং এটা ভেবে ভালো লাগছে যে, টিকা নিয়ে সুরক্ষার দিক দিয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকলাম।

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু হয়। চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, বৃহস্পতিবার আমাদের হাসপাতালে মোট ৫৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা নেওয়ার পর কেউ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানাননি। 

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালসহ বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে টিকা নেওয়া বিশিষ্টজনদের মধ্যে আছেন- সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্যসচিব মো. আব্দুল মান্নান, তথ্যসচিব খাজা মিয়া এবং বিএসএসএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

বাংলাদেশে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা। আট সপ্তাহের ব্যবধানে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে। বাংলাদেশে যেহেতু এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির ওপর এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

একে/এইচকে