বিজয়ের উল্লাসে বর্ণিল ঢাকা
বর্ণিল সাজে ঢাকা
১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল ও স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দিন। বাঙালির সবচেয়ে আনন্দের দিন। ১৯৭১ সালের এদিন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে বিশ্বের মানচিত্রে সৃষ্টি হয় নতুন একটি সার্বভৌম দেশ, বাংলাদেশ।
বিজয়ের এ দিনটি স্মরণ করে রাখতে রাজধানী ঢাকাকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। আলোকসজ্জায় রঙিন ঢাকা যেন পরিণত হয়েছে একখণ্ড লাল-সবুজের পতাকায়।
বিজ্ঞাপন
বিজয়ের ৪৯ বছর উদযাপন উপলক্ষে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে রাজধানী ঢাকা। বাহারি আলোকসজ্জা, সঙ্গে আছে লাল, নীল, হলুদ, সাদা, সোনালি— হরেক রঙের মরিচ বাতি। আলোকসজ্জার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ভাস্কর্যের প্রতীকী রূপ। জাতীয় পতাকার আদলে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ভবন।
এমন মোহনীয় সাজে রাজধানী ঢাকাকে দেখে মুগ্ধ সবাই। মনকাড়া এমন আলোকসজ্জা দেখতে স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিড় করছেন অনেকে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক, স্থাপনা, অফিস-আদালত সেজেছে বর্ণিল সাজে। সন্ধ্যার পরই লাল-সবুজের আলোতে ঝলমলিয়ে ওঠে পুরো রাজধানী। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জার ঝলকানি গাঁয়ে মেখে পুলকিত হচ্ছেন সবাই।
রাজধানীর ব্যাংকপাড়া খ্যাত মতিঝিল, পল্টন, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভবন, মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকার সোনালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, জীবন বীমা ভবনসহ বড় বড় স্থাপনা সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে এমন আলোকসজ্জা দেখে মুগ্ধ কর্মব্যস্ত মানুষও। অনেকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন, আবার অনেকে সুন্দর এ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন।
মতিঝিল শাপলা চত্বরের সামনের আলোকসজ্জা দেখে ক্যামেরাবন্দি করছিলেন ব্যাংকার আহসান কবির। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানিকনগর এলাকায় থাকি। প্রতি বছরই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোকসজ্জা করা হয়। প্রতিবার ঘুরে ঘুরে দেখি, এবারও দেখতে বের হয়েছি।
‘প্রতিদিনই এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। আলোকসজ্জার কারণে যে দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে, আসলেই চোখ ধাঁধানো। খুব ভালো লাগছে। যে কারণে দৃশ্যগুলো মোবাইলে ধারণ করছি।’
কলেজ শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদ বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে সাজানো এমন মনমুগ্ধকর দৃশ্য নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না। খুব-ই উপভোগ করছি, খুব-ই ভালো লাগছে। ইচ্ছা আছে বন্ধুদের নিয়ে সারারাত ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে দেখার।
ঝলমলে এই রাত পোহালেই ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস মরণপণ লড়াই করে বাংলার দামাল সন্তানরা বিজয় লাভ করে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। এই যুদ্ধ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের যুদ্ধ। মাতৃভূমির কপালে বিজয়ের লাল টিপ পরাতে লাখো শহীদ তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন, হাজারও মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন।
নিজ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে যারা এনে দিয়েছেন মহান এই স্বাধীনতা, বিজয়ের আগের এই রাতে সেসব বীর শহীদের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা।
এসআই/এসএম