গোল্ডেন মনির : এক সময়ের এই গামছা বিক্রেতার ৬১০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক


স্বর্ণ চোরাকারবারি বলে আখ্যা পাওয়া বিতর্কিত ব্যবসায়ী মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে রাজউক পরিচালক শাহীনুর ইসলামকে আবারও তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) কমিশনের উপ-পরিচালক সামছুল আলম স্বাক্ষর করা নোটিশে তাকে তলব করা হয়েছে।

তলবি চিঠিতে আগামী ২০ ডিসেম্বর তাকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর তলব করা হলেও হাজির হননি তিনি।

এই ঘটনায় গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু, রাজউকের দুই সিবিএ নেতাকে ওবায়দুল্লাহ হক ও জলিলও ডিএনসিসির সাবেক কমিশনার বিএনপি নেতা এমএ কাউয়ুম
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে গোল্ডেন মনিরের ৬১০ কোটি টাকা ও তার স্ত্রী রওশন আক্তারের ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে দুদক। এছাড়া গত ৩ ডিসেম্বর ৩ কোটি ১০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের অন্য মামলায় গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক।

স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বেআইনিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে গত ২১ নভেম্বর গোল্ডেন মনিরকে রাজধানীর বাড্ডায় তার নিজের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

কে এই গোল্ডেন মনির 
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক সময়ে গামছা বিক্রেতা ছিলেন মনির হোসেন। স্বর্ণ চোরাকারবারির পাশপাশি জমির ব্যবসার ‘মাফিয়া’ হিসাবেও তার পরিচয় আছে। তবে তিনি যে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন সে বিষয়েটি সামনে আসে নভেম্বরে তার বাড্ডার বাড়িতে অভিযানের পর। বিএনপির সঙ্গে মনিরের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিতও মিলেছে। নভেম্বরের শেষ দিকে মনিরকে গ্রেফতারের দিন তার বাড়ি থেকে ৯ লাখ টাকা মূল্যমানের বিদেশি মুদ্রাসহ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, চার লিটার মদ, ৮ কেজি স্বর্ণ, একটি বিদেশি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধারের কথাও জানানো হয়। পরে র‌্যাবের মুখপাত্র আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের কাছে অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন, যাতে মনিরের কোটি কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানানো হয়। বাড্ডা, নিকেতন, কেরানীগঞ্জ, উত্তরা, নিকুঞ্জ এলাকায় অবৈধভাবে নেওয়া ২ শতাধিক প্লট-ফ্ল্যাট তার আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।  মনিরের বাবা কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকার নিউ মার্কেট ও গাওছিয়া মার্কেট এলাকায় ফেরি করে গামছা বিক্রি করতেন।   

অস্ত্র, বিশেষ ক্ষমতা এবং মাদক আইনে রাজধানীর বাড্ডা থানায় দায়ের করা পৃথক তিন মামলায় জামিন চেয়েছিলেন গোল্ডেন মনির। তবে ১৩ ডিসেম্বর ওই জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দেন আদালত। তার আগে ৩ ডিসেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ জসীম রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

পুলিশ জানায়, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখায় গ্রেফতার গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। তাছাড়া ১০ দেশের মুদ্রা রাখায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। মোট ৩ মামলায় গ্রেফতার গোল্ডেন মনিরকে বাড্ডা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে তিনি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভূমি জালিয়াতি শুরু করেন। রাজধানীর বাড্ডা এলাকার রাজউকের ডিআইটি প্রজেক্টে প্রতারণার মাধ্যমে অনেক প্লট নিজের করে নেন। এভাবে রাজউক থেকে প্লট সংক্রান্ত সরকারি নথিপত্র চুরি করে এবং অবৈধভাবে রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের দাফতরিক সিল ব্যবহার করে রাজউক পূর্বাচলে, বাড্ডায়, নিকুঞ্জে, উত্তরায় এবং কেরানীগঞ্জে বিপুল সংখ্যক প্লটের মালিক হন।

অভিযোগ আছে, তিনি বর্তমানে নামে-বেনামে দুই শতাধিক প্লটের অধিকারী। তার বিরুদ্ধে থাকা ভূমি জালিয়াতির ৭০টি রাজউকের নথি ২০১৯ সালে নিজ কার্যালয়ে আইনবহির্ভূতভাবে হেফাজতে রাখা সংক্রান্ত একটি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া অনৈতিকভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করায় দুদক তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। সেটাও চলমান রয়েছে।

আরএম/এনএফ