পরিপাটি অফিসে মাহিয়া ফাউন্ডেশনের জালিয়াতি
মাহিয়া ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তা আটক - ছবি : ঢাকা পোস্ট
রাজধানীর আফতাবনগর আবাসিক এলাকায় নূর টাওয়ারের নবম তলায় মাহিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়। তিন কক্ষ বিশিষ্ট পরিপাটি এই অফিসটি দেখলে কারও বোঝার সাধ্য নেই যে, প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া। সাজানো-গোছানো এই অফিস দেখিয়ে শত চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মাহিয়া ফাউন্ডেশন।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ ও এনএসআই-এর যৌথ অভিযানে মাহিয়া ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। এ সময় অফিস থেকে ৭ হাজার সিভি, ৭০টি আইডি কার্ড, ভুয়া সনদ ও মানি রিসিভ জব্দ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
আটকরা হলেন- মো. বাবুল আক্তার (৩৫), আহমেদ আলী (৫০), মেহেদী হাসান (৫০), মিজানুর রহমান (৫৪), আব্দুল আল মামুন (৩১), মেহেদি হাসান (২৬), মামুন (৩১) ও গোলাপ রায়হান (২৬)। বাকি দুজনের নাম এখনও জানা যায়নি।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর আফতাবনগর আবাসিক এলাকায় নূর টাওয়ারের এ অভিযান চালায় র্যাব ও এনএসআই। মাহিয়া ফাউন্ডেশনের অফিসে সরেজমিনে দেখা যায়, তিন কক্ষ বিশিষ্ট অফিসের একটিতে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের চেম্বার, অন্য একটি কক্ষে ইন্টারভিউ রুম এবং অপর কক্ষে অন্য কর্মকর্তারা বসেন। ইন্টারভিউ রুমে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় তিন বস্তা সিভি রাখা চাকরিপ্রত্যাশীদের। এসব সিভি থেকে বেছে বেছে নির্বাচন করে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিল মাহিয়া ফাউন্ডেশন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে আসা ভুক্তভোগী মো. সৈকত ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাহিয়া ফাউন্ডেশনের ফুড পরিদর্শকের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করি। পরে আমাকে তারা ফোন দিয়ে ঢাকা আসতে বলে। ঢাকা আসারা পর তারা জানায় আমাকে সিলেকশন করেছে। এখন আমাকে ৫০ হাজার টাকা সিকিউরিটি মানি এবং ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিলে নিয়োগপত্র দিবে। পরে তাদের কথা মতো আমি টাকা দিয়ে নিয়োগপত্র নেই। ডিসেম্বরের ২২ তারিখ আমি যোগদান করি। কিন্তু যোগদানের এক মাস হয়ে গেলেও আমাকে তারা কোনো কাজ দেয়নি এবং বেতনও দেয়নি। পরে বিষয়টি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হলে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাই।
অভিযান শেষ র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমত মাহিয়া ফাউন্ডেশন নামে কোনো এনজিও প্রতিষ্ঠান সরকারি তালিকায় নেই। তারা যশোরের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের সনদ জাল করে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করার কোনো সরকারি অনুমতি নেই তাদের। কিন্তু তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করার সনদ দেখিয়ে খাদ্য বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদে ৫০০ জনের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। পরে তাদের বিজ্ঞপ্তিতে যারা সাড়া দিয়েছেন তাদের মধ্যে ১০০ জনের কাছ থেকে তারা ৫০-৬০ হাজার টাকা করে নিয়েছে।
তিনি বলেন, আটক ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের নাম পরিচয় আমরা পেয়েছি। বাকিদের নাম পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়মিত মামলা করা হবে।
এমএসি/এইচকে